রবিবার
০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত বিরোধ, সরকারের পদক্ষেপ কী?

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ এএম আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ এএম
ফাইল ছবি
expand
ফাইল ছবি

গণভোট এবং জুলাই জাতীয় সনদ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুই দলের শীর্ষ নেতা একে অপরকে তির্যক মন্তব্যের মাধ্যমে নিশানা করছেন।

এদিকে এনসিপি নেতারা বড় দুই দলের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করছেন এবং সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

এই পরিস্থিতিতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিরোধ সামলাতে সরকারের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীভাবে পর্দার আড়ালে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল নেতৃত্বে চারজন উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে দুই দফা আলোচনা করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত সমঝোতার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক বক্তৃতায় বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দলটি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট চায়।

অপরদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানান, সরকারের উপদেষ্টারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু নির্বাচনের দিন গণভোট তারা মানবেন না। অবশ্যই গণভোট আগে হতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) আগে গণভোট চায়।

২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়ার পরপরই দলগুলোর এরকম অবস্থান প্রকাশ্যে আসে। এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বক্তব্য দিচ্ছে।

তবে সূত্র জানায়, সমঝোতার ক্ষেত্রে সরকার দুটি প্রস্তাব সামনে রেখে আলোচনা শুরু করেছে। এর মধ্যে একটি হলো-বিএনপিকে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন মেনে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অপর প্রস্তাবে জামায়াতকে বলা হচ্ছে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট মেনে নিতে। কিন্তু উভয় পক্ষই এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে তাদের অবস্থানে অনড়।

এ অবস্থায় বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে যোগাযোগ করবে সরকার। এছাড়া ঐকমত্য কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, এর অধিকাংশই সত্য নয়। কিন্তু এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে দলগুলোর সঙ্গে তারা বিরোধে যেতে চান না।

সূত্র জানায়, গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে এরকম মুখোমুখি অবস্থানে সরকার বিব্রত। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধ মেটাতে পর্দার আড়ালে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। বিষয়টি সমাধানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সমঝোতার পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নসংক্রান্ত আদেশ জারি হতে পারে।

সূত্র আরও জানায়, সমঝোতার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ কয়েকটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে। প্রথমত, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না করে আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদের ওপর ছেড়ে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একদিনে আয়োজনের পক্ষে। তৃতীয়ত, জুলাই সনদে প্রধান উপদেষ্টার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আদেশ জারি করা।

তবে এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে, ঢাকায় বিএনপির যে নেতৃত্ব রয়েছে, তারা বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এজন্য লন্ডন থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতি লাগবে। তাই প্রধান উপদেষ্টাকে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। তিনি এ সময়ে দলগুলোকে বিরোধ মেটাতে অনুরোধ করেন।

অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানা যায়, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু দলগুলো ছাড় দিতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত দলগুলো বলেছে, সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা দলীয় অবস্থান জানিয়েছি। এরপর আপনারা সুপারিশ করেন।

সূত্র আরও জানায়, দলগুলো যে অভিযোগ করছে, এর অধিকাংশই সত্য নয়। চাইলে এগুলো প্রমাণ করা যায়। কারণ এখন পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে, সেগুলো বিটিভি লাইভ প্রচার করেছে। ফলে এর ডকুমেন্ট আছে এবং সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনই এই ডকুমেন্ট সামনে এনে তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মুখোমুখি হতে চায় না।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এখন পুরো বিষয়টি সরকারের হাতে। কমিশনের আর কোনো দায়িত্ব নেই। তবে সরকার চাইলে তারা সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন