মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের নাম ঘোষণা করল বিশ্বব্যাংক

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম
ফাইল ছবি
expand
ফাইল ছবি

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনটি বলছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানকে আগামী বছরগুলোতে জলবায়ুর ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলায় কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতা: দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের অভিযোজনে সহায়তা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। সেখানেই উঠে আসে দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু ঝুঁকি এবং অভিযোজন প্রস্তুতির সামগ্রিক চিত্র।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ চরম জলবায়ু ঝুঁকির আওতায় পড়বে। উচ্চ তাপমাত্রা, ভয়াবহ বন্যা, উপকূলীয় লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে এই পরিবর্তন। এর ফলে কর্মসংস্থান সংকট এবং পারিবারিক পর্যায়ে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার তিন-চতুর্থাংশ পরিবার ও প্রতিষ্ঠান আগামী ১০ বছরের মধ্যে আবহাওয়াজনিত আঘাতের শঙ্কা করছে। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ৮০ শতাংশ পরিবার ইতোমধ্যে কোনো না কোনো অভিযোজনমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেগুলোর বেশিরভাগই স্বল্প খরচের সাধারণ পদক্ষেপ; উন্নত প্রযুক্তি বা স্থায়ী অবকাঠামো ব্যবহারে এখনও পিছিয়ে রয়েছে তারা।

বাংলাদেশের উপকূলের ২৫০টি গ্রামে করা জরিপে জানা গেছে, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো এখনো বড় ঘাটতির জায়গা। দীর্ঘমেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার দুর্যোগ-সুরক্ষা অবকাঠামোর অভাবকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ৫৬ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা প্রয়োজনীয় অভিযোজনও করতে পারছে না। এর ফলে দরিদ্র ও কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোর ওপর চাপ আরও বাড়ছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টারসহ সরকারি বিনিয়োগ বহু জীবন রক্ষা করেছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানভিত্তিক কেস স্টাডিতে দেখা যায়, লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবং সময়মতো তথ্য সরবরাহ দুর্যোগকালে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের বড় সহায়তা হতে পারে। তবে সরকারি উদ্যোগের পরিধি আর্থিক সংকটের কারণে সীমিত হওয়ায় অভিযোজন ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত নীতি-প্যাকেজ জরুরি।

বাংলাদেশে ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে বলেন, “বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বারবার পরীক্ষার মুখে পড়ছে। অভিযোজন বাড়লেও ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে—এ কারণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।” তিনি আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি এবং ঝুঁকিভিত্তিক অর্থায়ন জোরদারের পাশাপাশি শহরাঞ্চলে লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

প্রতিবেদন আরও জানায়, আগাম সতর্কবার্তা, বীমা, এবং আনুষ্ঠানিক ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো গেলে জলবায়ুজনিত ক্ষতির এক-তৃতীয়াংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেসরকারি খাত দ্রুত বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে অভিযোজন প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে। বাজেট সংকট সত্ত্বেও পরিবহন ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থায়নে প্রবেশাধিকার সহজ করা এবং নমনীয় সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো তৈরির মাধ্যমে সরকার বেসরকারি খাতকে সহায়ক পরিবেশ দিতে পারে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় শক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তথ্য সংগ্রহ—সবকিছুই ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের কাছে অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং। তিনি জানান, বিভিন্ন পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার কাজ চলমান রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন