

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


পর পর কয়েক দিনের কম্পন বিশেষজ্ঞদের কাছে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কম্পনগুলোর উৎপত্তিস্থল ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় রাজধানীকে এখন ‘রেড জোন’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
২১ নভেম্বর নরসিংদী থেকে উৎপন্ন ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি সারা দেশে অনুভূত হয়—যা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে তীব্র ঝাঁকুনি।
মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আবারও নরসিংদীর পলাশে ৩.৩ মাত্রার কম্পন, পরে ঢাকা শহরের বাড্ডা এলাকায় ৩.৭ এবং ৪.৩ মাত্রার আরও দুটি কম্পন বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
অতীতের বেশিরভাগ ভূমিকম্প দেশের বাইরে উৎস হলেও এবার সরাসরি রাজধানীর আশপাশ থেকেই কম্পন শুরু হচ্ছে—যা অনেক বড় বিপদের ইঙ্গিত।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক কম্পন বড় ভূমিকম্পের আগাম সংকেত হিসেবে দেখা যেতে পারে।
তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করায় বাংলাদেশ যে কোনো সময় ৯ মাত্রার বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার অধিকাংশ ভবনই ধসে পড়তে পারে এবং প্রাণহানির সংখ্যা হতে পারে ভয়াবহ।
২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে কম্পনের বাইরে আতঙ্কে বাড়ি থেকে নামতে গিয়ে, লাফ দিয়ে বা ধাক্কাধাক্কিতে ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং বহু মানুষ আহত হন।
রাজধানীর অনেক ভবনে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, কোথাও কোথাও ভবন হেলে পড়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লেগেছে, এমনকি মাঠের মাটিও ফেটে গেছে। মাত্র মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও এমন ক্ষয়ক্ষতি দেখায়—অধিক শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা।
রাজধানীতে ৬ মাত্রার বেশি কম্পন হলে অধিকাংশ পুরোনো ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। গ্যাস পাইপলাইনে ফাটল ধরে বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগতে পারে, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও অকার্যকর হয়ে পড়বে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
ঢাকায় আগুন নেভানো বা উদ্ধারকাজের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো—যেমন বিমানবন্দর কার্গো গুদামের আগুন, সিদ্দিকবাজার বিস্ফোরণ, বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড বা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি—দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা স্পষ্ট করে দেয়। এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে যদি শত শত ভবন একসঙ্গে ধসে পড়ে, তাহলে রাজধানীতে প্রকৃত অর্থেই মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় দেশের প্রস্তুতি অত্যন্ত সীমিত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বড় প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই বছরের পর বছর ধরে থমকে আছে। কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী—গত ৪৮৫ বছরে ঢাকার আশপাশে ছয়টি বড় ভূমিকম্প হলেও গত বারো বছরে সেই সংখ্যা দশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ঝুঁকির কেন্দ্র ধীরে ধীরে রাজধানীর দিকে সরে আসছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, বার্মা প্লেটের নিচে ইন্ডিয়ান প্লেট চাপ তৈরি করছে—কবে সে শক্তি মুক্ত হবে তা কেউ জানে না, তবে ঝুঁকি দিন দিনই বাড়ছে।
রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম পুরান ঢাকার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করে জানান, পুরান ঢাকার অধিকাংশ ভবন অনুমোদন ছাড়া তৈরি এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ছোট জায়গায় ৬–৭ তলা ভবন নির্মাণ হওয়ায় বিপদের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের তালিকা তৈরি ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হবে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য করুন
