

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ঢাকা শহরের ঘনবসতি, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, সংকীর্ণ রাস্তা এবং খোলা স্থানের অভাব রাজধানীকে ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে আশ্রয় নেওয়া ও উদ্ধার কাজ—দুটিই কঠিন হয়ে উঠবে। যদিও রাজধানীর প্রায় সব এলাকাই কমবেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ১৫টি এলাকাকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গবেষণার সূত্র
আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক প্ল্যাটফর্ম সায়েন্স ডাইরেক্ট-এ প্রকাশিত “An Assessment of Physical Aspects for Seismic Response Capacity in Dhaka, Bangladesh” শীর্ষক গবেষণায় রাজউকের জিআইএস ডাটাবেজ ব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভৌত অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়।
ঢাকার যে ১৫টি এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে
গবেষণা অনুযায়ী ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলো হলো— সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও ও বাড্ডা।
ঝুঁকির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—
ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা
পুরোনো ও ভগ্নদশা ভবন
অত্যধিক জনসংখ্যা
ভবনগুলোর অতিরিক্ত ঘনত্ব
সংকীর্ণ রাস্তা
দাহ্য গুদাম ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা
খোলা জায়গার অভাব
অপ্রতুল চিকিৎসাসেবা
ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কাজে সীমাবদ্ধতা
৩২টি এলাকার ওপর জরিপ—কারা বেশি, কারা কম ঝুঁকিতে
গবেষণায় মোট ৩২টি এলাকা পর্যালোচনা করা হয়—যেমন উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, রমনা, শাহবাগ, আজিমপুর থেকে শুরু করে কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, পল্লবী, কল্যাণপুর, মিরপুর, গাবতলী ইত্যাদি।
দক্ষিণাঞ্চলের ঝুঁকি বেশি
কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ ও সবুজবাগ—এগুলো পুরোনো এলাকা। রাস্তাঘাট সরু, ভবনগুলো বয়স্ক এবং ঠাসাঠাসি—ফলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সূত্রাপুর-শ্যামপুরেও ঘনবসতি ও খোলা জায়গার অভাবে উদ্ধারকাজ অত্যন্ত কঠিন হবে।
উত্তরের বহু অঞ্চলও বিপদে
কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, মানিকদী ও গাবতলী—এসব এলাকায় খোলা স্থানের পরিমাণ কম, রাস্তা ছোট এবং ভবনের ঘনত্ব বেশি। পল্লবী এলাকায় চিকিৎসাসেবার অভাব বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে।
যেসব এলাকায় ঝুঁকি তুলনামূলক কম
পরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে গুলশান, রমনা, শাহবাগ, আজিমপুর, শেরেবাংলানগর, ধানমন্ডি, মতিঝিল—এসব অঞ্চল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। কারণ—
প্রশস্ত রাস্তা
পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান (রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সহজ উপস্থিতি
লালবাগে ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লার খোলা স্থান কিছুটা নিরাপত্তা বাড়ায়। নিউমার্কেট অঞ্চলের ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় ও মাঠ থাকার কারণে ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
বিশেষজ্ঞের মন্তব্য
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান জানান— ভূমিকম্পে কোনো এলাকার ঝুঁকি নির্ভর করে:
মাটির গঠন,
ভবন নির্মাণে আইন-কানুন মানা হয়েছে কিনা,
ভবনের বয়স ও স্থায়িত্ব,
অবকাঠামোর ঘনত্ব, এই উপাদানগুলোর ওপর। মাটি ভালো হলেও ভবন যদি নাজুক হয়, তবে এলাকা ঝুঁকিপূর্ণই থাকবে। একইভাবে নিয়ম মেনে নির্মাণ হলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
মন্তব্য করুন
