শনিবার
০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন হলে ক্ষমতা থাকবে ভারতের কাছে: ফরহাদ মজহার

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম
রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার
expand
রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার

রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার বলেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে ছাত্র-তরুণরা যেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তাতে তারা ভুল করেছেন।

তার কারণেই দেশে একটি নির্বাচনবাদী বয়ান গড়ে উঠেছে। এই নির্বাচনবাদীরা আবারও সেই পুরনো কথাই বলছে— বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে যদি ক্ষমতা লুটেরা-মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারা বলছে, একটি বৈধ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক সমাজ তা স্বীকৃতি দিয়ে হাততালি দেবে।

কিন্তু নির্বাচনের পরে ক্ষমতা তোমার (তরুণদের) থাকবে না; ক্ষমতা থাকবে ভারতের কাছে।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আরও বক্তৃতা করেন কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম প্রমুখ।

ফরহাদ মজহার বলেন, সংবিধান তো কলোনিয়াল লোকজনই করেছে—আমি আপনাকে শাসন করবো, তাই আমি আইন বানাবো। আর জনগণ যখন নিজেরাই নিজেদের শাসনের পদ্ধতি আবিষ্কার করে, এটাকে বলে গঠনতন্ত্র বা কনস্টিটিউশন।

এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার প্রথম কাজ হচ্ছে এই ধরনের আলোচনাগুলো—আমরা কি ভুল করছি? আমরা ঠিক করব কি করা যাবে। সে ভুলের দায় নিতে হবে সকলকে। কিন্তু ভুল যে করেছি, এটা স্বীকার করতেই হবে—পাঁচ তারিখে আমরা যেভাবে সরকার গঠন করেছি, তাতে ভুল ছিল। তারা তার সঙ্গে জড়িত ছিল। কেন তার আগে কিছু ছাত্র যুক্ত ছিল, যারা আন্দোলনে ছিল না।

পরবর্তীকালে যারা যারা আছে, তারা কেন প্রতিবাদ করল না। কিন্তু আপনি সরে যাওয়ায় মূল জায়গা থেকে, স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটা নির্বাচনবাদী বয়ান গড়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনবাদীরা বলে, বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হবে যদি লুটেরা-মাফিয়ার হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। একটা বৈধ ক্ষমতা দেওয়ার জন্য নির্বাচন হবে; আন্তর্জাতিক লোকজন হাততালি দেবে; কিন্তু ক্ষমতা আপনাদের থাকবে না—ক্ষমতা থাকবে ভারতের কাছে। নির্বাচন করবেন ঠিকই, কিন্তু ক্ষমতা ভারতের কাছে থাকবে।

সাংবাদিকরা লিখে রাখুন—যেদিন আপনি নির্বাচন করবেন, ভারত তখন বিভিন্ন প্রকার হিসাব দেখে, ভিসা বন্ধ করা সহ নানা পদক্ষেপ পরবর্তীকালে করবে। নিশ্চিত থাকুন।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, আমরা একটা মূর্খ জাতি এবং এখনো পর্যন্ত আমাদের ছেলেরা যত রক্ত দিয়েছে, আমরা তার মূল্য বুঝতে পারিনি।

তরুণরা এখনো পর্যন্ত একটি পত্রিকা বের করতে পারেনি—কি বিপ্লব করবেন? আগামী দিন কীভাবে ফেস করবেন? আজকে ভারত বসে আছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে। যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে, যে কোনো কিছু বাংলাদেশে ঘটতে পারে। আমরা এখন একটি অবৈধ সরকারের উপর বসে আছি।

যত বড় কথা বলি না কেন, এই সরকারের কোনই এখতিয়ার নেই জাতীয় ঐক্যমত কমিশন গঠন করার। কারণ এটা একটি ইলিগ্যাল গভর্নমেন্ট। শেখ হাসিনার সংবিধান যদি আপনি শপথ করে রক্ষা করবেন—তখনই রক্ষা হবে; এটাকে আপনি পরিবর্তন বা সংস্কার করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, স্টেট তামাশা করার জন্য নয়—রাষ্ট্র তামাশা করতে পারে না। যদি আপনি মনে করেন সংবিধান রক্ষা করবেন, তাহলে সংবিধান রক্ষা করুন; আর যদি মনে করেন সংবিধান রক্ষা করবেন না, তাহলে আপনি ‘পাঁচ’ তারিখে সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রক্রিয়া শুরু করলে এই সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ফালতু কথা বলার প্রয়োজনই পড়ত না।

কারণ কর্ম-পরিষদে যেটাই আপনি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন, ওটাই হয়ে যেত নতুন গঠনতন্ত্র; নতুনভাবে দেশকে গঠনের প্রক্রিয়ায় ঢুকত—এটাকেই বলে গঠনতন্ত্র।

ফরহাদ মজহার বলেন, কিছু ছোট ছোট কনসেপ্ট বা ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ—চিন্তাকে পরিবর্তন করা যায়। প্রথমটি হলো গণ সার্বভৌমত্ব। যখনই কোনো গণ অভ্যুত্থান হয়, তখন যে গণ সার্বভৌমত্ব কায়েম করতে হয়, তা হলো জনগণের হাতে ক্ষমতা দেওয়া। গঠনতন্ত্র মানে কি রাষ্ট্রের হাতে ক্ষমতা? আমরা রাষ্ট্রকে এতটা বিশ্বাস করিনি। রাষ্ট্রের ক্ষমতা হল আমলার ক্ষমতা, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা, পুলিশের ক্ষমতা; কিন্তু আমরা এখন জনগণ নিজেরাই নিজেদের হাতে ক্ষমতা চাই। আমরা ঠিক করব—সেনাবাহিনী, পুলিশ, ব্যাংক, অর্থনীতি কিভাবে পরিচালিত হবে; সমস্ত কিছু আমরা ঠিক করব।

এটাকেই ডিসেন্ট্রালাইজেশন বলা যায়—ঢাকাকে ভেঙে দিয়ে প্রতিটি জেলাকে স্বাধীন করে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে, যাতে জনগণ সরাসরি যে কোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিজেই অংশগ্রহণ করতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের অগ্রজদের মাধ্যমে এস্টাবলিশমেন্টের হাতে ক্ষমতা চলে গেছে।

তখন দেশের স্থাবলতার প্রয়োজনীয়তায় একটি সরকার গঠন করা প্রয়োজন ছিল; আমরা তাই বঙ্গভবনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এখন যারা সংস্কারের বিরোধিতা করছেন তারা কি পেলেন—সে বিষয়ে আমি জানতে ইচ্ছুক।

তিনি বলেন, এখন বলা হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হচ্ছে। সত্যিই এই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কি? কেউ কি এ বিষয়ে কোনো লিফলেট বা ধারণা উপস্থাপন করেছেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে তা জানতে চাইতাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কনসেপ্ট নিয়ে কিছু জানা যায়নি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন