

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের অফিসগুলোতে সেবা পেতে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না—এমন অভিযোগে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নামজারি, খাজনা আদায় কিংবা নাম সংশোধনের মতো মৌলিক সেবার জন্যও অতিরিক্ত টাকা না দিলে ফাইল মাসের পর মাস আটকে থাকে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, অফিসের কিছু কর্মচারী ও দালালদের নিয়ে গঠিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট নিয়মিতভাবে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিগার সুলতানা এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, এক তহশিলদারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, অফিস সহায়ক, সহকারী, নাজির, হিসাবরক্ষক এবং দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধাপে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করা হয়। অনলাইনে আবেদন করলেও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খতিয়ান প্রস্তাব, প্রত্যয়ন কিংবা নাজিরের স্বাক্ষর—প্রতিটি ধাপেই ঘুষের দাবি করা হয়। সরকারি ফি যেখানে ১ হাজার ১৭০ টাকা, সেখানে বাস্তবে আদায় হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিছু ক্ষেত্রে এই পরিমাণ লাখ টাকায় পৌঁছায়।
একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের এক বাসিন্দার কাছ থেকে নামজারির কাজে চার হাজার ৭০০ টাকা নিচ্ছেন অফিস সহায়ক মনির হোসেন, যদিও সরকারি ফি অনেক কম।
বামনী ইউনিয়নের বাসিন্দা আউয়াল মিয়া জানান, অফিসের হিসাবরক্ষক জাহাঙ্গীর আলম তিন হাজার ৭০০ টাকা নিয়েও তার কাজ সম্পন্ন করেননি এবং টাকা ফেরতও দেননি। দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও বামনী এলাকার আরও কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশী একই অভিযোগ করেছেন।
এছাড়া খাসেরহাট ভূমি অফিসের তহশিলদার আব্দুস সত্তার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ফাইলের জন্য তিনি দালালদের মাধ্যমে ৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন, এমনকি নালিশি মামলার তদন্ত রিপোর্টের জন্য ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করেন।
চরমোহনা গ্রামের বাসিন্দা মন্তাজ মিয়া জানান, তার জমির নামজারি চলাকালে একটি মামলার তদন্তে তহশিলদার আব্দুস সত্তার তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি মন্তাজের বিপক্ষে প্রতিবেদন দেন এবং এখনো হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মন্তাজ। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
তবে তহশিলদার আব্দুস সত্তার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি খাস জমির তথ্য দেওয়ারও আইনগত বাধা আছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিগার সুলতানা বলেন, আমার কার্যালয়ে সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো অনুমতি নেই। কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে টাকা নেয়, সঙ্গে সঙ্গে জানান। তিনি আরও জানান, চরবংশী ইউনিয়নের তহশিলদার ও মনিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে জেলা প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান কাউছার বলেন, ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ দিলে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন