

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলন, যা দেশের রাজনৈতিক গতিপথে নতুন মোড় এনে দেয় এবং জাতীয় জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরবর্তী সময়টিতে একের পর এক সেনা অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে দেশ অস্থির হয়ে উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে সংঘটিত হয় ৭ নভেম্বরের বিপ্লব, যা সেই সময়কার নৈরাজ্য ও অচলাবস্থার অবসান ঘটায়।
এই ঘটনার মধ্য দিয়েই তৎকালীন সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান এবং নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়।
বিএনপিসহ সমমনাদের কাছে দিনটি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতি বছরের মতো এবারও দলটি দিবসটি উপলক্ষ্যে ১০ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দিনটির পর থেকে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নতুনভাবে রূপ নিতে শুরু করে।
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দিক থেকে আরও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে এবং গণতন্ত্র নতুন গতি পায়। এ সময় থেকেই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা হয় বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেন।
সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান তার স্মৃতিকথা ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ৭ নভেম্বর গোটা দেশজুড়ে সৈনিক ও জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উত্থান ঘটে। আর জেনারেল জিয়া সেই অভ্যুত্থানের ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় নেতৃত্বে উঠে আসেন।
তদানীন্তন দৈনিক বাংলার প্রতিবেদনেও উল্লেখ ছিল—সিপাহি ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটে। মেজর জেনারেল জিয়া বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন। সকালেই রেডিওতে শোনা যায়, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।
ঘটনার পর জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। সেদিনের ঢাকা ছিল মিছিল ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর এক নগরী। সৈনিক ও জনতা রাস্তায় আলিঙ্গন বিনিময় করেন, সেনাদের ট্যাংকে ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। আনন্দের সেই আবেগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে।
মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি দশ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়। সকাল ১০টায় দলের সিনিয়র নেতারা ও কর্মীরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
বেলা ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি বের হবে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একই ধরনের র্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে একাধিক কর্মসূচি—
৫ নভেম্বর: শ্রমিক দলের আলোচনা সভা
৮ নভেম্বর: ছাত্রদলের আলোচনা সভা
৯ নভেম্বর: ওলামা দলের উদ্যোগে এতিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
১০ নভেম্বর: তাঁতীদলের আলোচনা সভা
১১ নভেম্বর: কৃষক দলের আলোচনা সভা
১২ নভেম্বর: বিএনপির উদ্যোগে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান আলোচনা সভা
১৩ নভেম্বর: জাসাসের আয়োজন, শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে দলটির সব শাখা ও সহযোগী সংগঠনকে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১২-দলীয় জোট ও অন্যান্য সমমনাদের পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
