

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কুষ্টিয়ার ৪টি সংসদীয় আসন দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
তবে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন বাদে বর্তমানে বাকি তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ মিছিলসহ রাজপথে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা। এতে চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন তিন সংসদীয় আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা।
এদিকে, বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াতে ইসলামী তাদের একক দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।এতে স্বস্তি রয়েছে তাদের মাঝে।
এর আগে, গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লাকে। তবে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহবায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েলের সমর্থকেরা।
তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ ১৬ বছর দলের চরম দুঃসময়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকার কারণে জুয়েলের নামে ৩১৭টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলাকে সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে জুয়েলের বিকল্প নেই।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তরুণ ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন।
তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজপথে নানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের সমর্থকেরা।
তাদের অভিযোগ, ব্যারিস্টার রাগীব ঢাকায় থাকেন। বিগত ১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে তেমন একটা দেখা যায়নি। এরকম ‘বসন্তের কোকিলকে’ মনোনয়ন দেওয়ায় নিশ্চিত এই আসনটি হারাতে হবে। ফসল চলে যাবে জামায়াতের ঘরে।
এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত শহিদুল ইসলাম এনপিবি নিউজকে বলেন, চূড়ান্ত মনোনয়ন এখনো দেওয়া হয়নি। সম্ভব প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।এখনো পুনর্বিবেচনা চলছে।
আমাদের দলের নেতাকর্মীরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন ফলাফল জানানো হয়নি।"
স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দলের প্রতিষ্ঠা সদস্য। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো না।দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আমি আমার দায়িত্ব পালন করবো। তবে আমি আশাবাদী পুনর্বিবেচনা হবে।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা প্রথমে বিক্ষোভ করলেও এখন অপেক্ষাকৃত শান্ত।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে অশান্ত হয়ে উঠেছে কুমারখালী উপজেলা।
মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ, সংবাদ সম্মেলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম আনছার প্রামানিকের সমর্থকেরা।
এছাড়াও এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী শেখ সাদী এবং কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সদস্য হাফেজ মঈনউদ্দীন। এই আন্দোলনের মধ্যেই যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি আনছার প্রামানিকের ছেলে কুমারখালী উপজেলা যুবদল আহবায়ক মো. জাকারিয়া আনসার মিলনকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে।
দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে বিএনপির হাইকমান্ড কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেও মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের কর্মী-সমর্থকদের কোনোভাবেই নিবৃত করতে পারছে না। তবে মনোনয়ন ঘোষণার পরও দলের স্বার্থে এক জোট হয়ে কাজ না করে রাজপথে আন্দোলন করাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না মনোনয়নপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য প্রার্থীরা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার এনপিবি নিউজকে বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল,এখানে অনেকেরই ত্যাগ, ঘাম, শ্রম আছে। কেন্দ্রীয় থেকে সবার সাথে মোটামুটি কথা হচ্ছে,আশার করি এটা খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা দাবি করছেন তারাও দলের ত্যাগী নেতা। আমি এটাকে খুব একটা নেগেটিভ হিসেবে দেখছি না। বিএনপি অনেক বড় দল। এখানে একাধিক যোগ্য নেতা রয়েছেন। তাই ক্ষোভ-অভিমান থাকতেই পারে।
তিনি আরও বলেন, এগুলো নিরসনে দলের পক্ষ থেকে আমরা কাজ করছি। সবার সঙ্গে কথা বলছি। আশা করছি রাগ-ক্ষোভ যাই থাকুক না কেন, দিন শেষে নেতাকর্মীরা সবাই একজোট হয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন।
মন্তব্য করুন