

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ঘটনাটি এমন যে শুনলে শিউরে উঠতে হয়। দোকানের ভেতরে বসে থাকা যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে খুব কাছে থেকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া খুন হওয়ার এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এলাকাগত আধিপত্য নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বই এই হত্যার মূল কারণ।
এই সংঘাতের পেছনে মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে মফিজুর রহমান মামুন নামে স্থানীয় এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর নাম। তিনি বিদেশে বসেই ভাড়াটে হামলাকারীদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি পরিচালনা করেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। মামুনকে ২০২১ সালে পল্লবী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে জামিনে বেরিয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৭টি মামলা রয়েছে।
ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা জনি ভুঁইয়া নামে একজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তিনি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সরাসরি গুলিতে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। জনি বলেন, এই খুনের জন্য তাদের একটি দলকে ভাড়া করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ আসামিকে আদালতে হাজির করলে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা নথিবদ্ধ করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান জনির জবানবন্দি নথিবদ্ধ করেন।
গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পল্লবীর পুরনো থানার কাছে সি ব্লকে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে মুখোশ ও হেলমেট পরা তিন ব্যক্তি ঢুকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে খুব কাছ থেকে গুলি করে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দীনা বাদী হয়ে মঙ্গলবার পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামি হিসেবে জনিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অপর আসামিরা হলেন- সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ওরফে মনির হোসেন (৩০), সোহাগ ওরফে কালু (২৭), মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম (২৮) ও রোকন (৩০)। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও সাত-আটজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পল্লবী এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের অনুসারীরা। জমি দখল, চাঁদাবাজি, চাঁদা না পেয়ে গুলির ঘটনা প্রায়ই ঘটতে থাকে। এসব ঘটনায় মামুনের ভাই জামিলুর ও মশিউরের নামে থানায় একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তালিকায় ওপরের দিকে তাদের নাম থাকলেও তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয়ভাবে দ্রুত পরিচিতি পান গোলাম কিবরিয়া। আধিপত্য বিস্তারে প্রভাব খাটাতে থাকেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা। পুলিশও সেই সূত্র ধরেই তদন্ত এগোচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, মামুন বিদেশে বসে ওই এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিছুদিন আগে কিবরিয়া সেখানে চাঁদা নিতে এলে মামুনের লোকজন বাধা দেয়।
মামুন ফোন করে তাকে সেখানে যেতে নিষেধ করেন। এছাড়া মামুন পল্লবী থানা যুবদলের কমিটিতে তার কিছু লোককে ঢুকাতে কিবরিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিবরিয়া তা শোনেননি। এসব কারণে মামুন তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। সেই ক্ষুব্ধতা থেকেই খুনি ভাড়া করে এই হত্যার ঘটনা ঘটান।
মন্তব্য করুন
