শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনি মহা ঐক্যের পথে বিএনপি, নেতৃত্বে তারেক রহমান

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৯ এএম
গ্রাফিক্স : এনপিবি
expand
গ্রাফিক্স : এনপিবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে সব দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। লক্ষ্য জুলাই পরবর্তী সবাইকে সাথে নিয়ে দেশ গড়া।

আর এই মহামিলনের নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোট রাজনীতি ও মেরূকরণ ততই স্পষ্ট হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নিতে কে কার সঙ্গে হাত মেলাবে—তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও পর্যালোচনা।

সম্প্রতি জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি ও সেই অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে জামায়াতে ইসলামী সাতটি রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে।

যদিও সংশ্লিষ্ট দলগুলো একে সরাসরি ‘নির্বাচনি জোট’ হিসেবে দেখতে নারাজ, তবে এটি আসন্ন নির্বাচনের প্রাক-রাজনৈতিক মেরূকরণকে আরও জোরদার করেছে।

নির্বাচনি মহা ঐক্যের পথে বিএনপি: এদিকে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও জোটের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার আলোচনা শুরু করেছে।

দলটি যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া সহযোগী দলগুলোর কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছে।

সূত্র বলছে, বিএনপি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণতন্ত্র মঞ্চ, সিপিবি ও আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলছে বৃহত্তর নির্বাচনি ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বৃহৎ নির্বাচনি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। কারা এতে যুক্ত হবে, তা যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে।”

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম, লেবার পার্টি, বিপিপি ও গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক শক্তি এখন আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই দলগুলোর অধিকাংশই বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি জোটে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ—

১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার জানিয়েছেন, তারা যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গেই ছিলেন এবং আগামী নির্বাচনেও একসঙ্গে অংশ নিতে চান।

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ইতোমধ্যে বিএনপিকে দেওয়া হয়েছে।

এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ জানান, ২০১২ সাল থেকে তাদের দল বিএনপির সঙ্গে আছে এবং সেই সম্পর্ক বজায় থাকবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থান: বিএনপি চাইছে গণতন্ত্র মঞ্চকেও নতুন নির্বাচনি জোটে যুক্ত করতে। মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। এখন আসনভিত্তিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে আনুষ্ঠানিক জোট নয়।”

মঞ্চের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম জানান, “ইলেকটোরাল পলিটিক্স নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, তবে সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর।”

এনসিপি ও নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোটে যোগ দেয়নি। দলের নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আমরা সংস্কারভিত্তিক রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিলাম, তবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে।”

সূত্র জানায়, এনসিপির একাংশ বিএনপির সঙ্গে জোটের পক্ষে, অপর অংশ জামায়াত বা বিকল্প জোটের চিন্তায় রয়েছে।

সম্প্রতি উত্তরায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক হয়—যেখানে ভবিষ্যৎ নির্বাচনি সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়।

জামায়াত ছাড়া ইসলামি দল ও আলেম সমাজের সম্পৃক্ততা: জামায়াত ছাড়া অন্যান্য ইসলামি রাজনৈতিক দল ও আলেমদেরও পাশে পেতে চায় বিএনপি।

দলটি ইতোমধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

জমিয়তের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে। খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আপাতত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আন্দোলনে মনোযোগী, তবে ২৫ অক্টোবরের শূরা সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এছাড়া বিএনপির নেতারা হাটহাজারী মাদরাসা, ছারছীনা দরবার ও বিভিন্ন আলিয়া ও কওমি ধারার মুরুব্বিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন।

তাদের ভাষায়, “দেশের সব অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই আমাদের লক্ষ্য।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন