শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন

জোট নয় একাই নির্বাচন করতে চায় এনসিপি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২২ এএম
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি
expand
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমিতে গঠিত তরুণ নেতৃত্বের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে— এবার কোনো জোটে নয়, নিজেদের পতাকা নিয়েই নির্বাচনের ময়দানে নামবে এনসিপি।

তবে দলটি জানাচ্ছে, “জোট নয়” অবস্থান মানে সহযোগিতা নয়— এমন নয়। অভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু আসনে কৌশলগত সমন্বয় হতে পারে।

দলীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ অন্তত ১৭০টি আসনে প্রার্থী তালিকার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, নাহিদ, জারা, আদিব, সামান্থা ও নিভা— এই পাঁচজন শীর্ষ নেতা রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে লড়াইয়ে নামতে পারেন।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, অধিকাংশ নেতাকর্মী মনে করেন, এখনই সময় স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখার। জোটের রাজনীতি আমাদের লক্ষ্য পূরণে প্রতিবন্ধক হতে পারে। তবে অভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও জাতীয় এজেন্ডার ভিত্তিতে কিছু সমঝোতা সম্ভব।

দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় দেখা যায়, জোটে না গেলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী উভয় দলই এনসিপিকে নিজেদের পক্ষে টানতে চাচ্ছে। এই দুই দলই বিশেষ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, জোট গঠন, আসন ভাগাভাগি ও প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।

এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার আচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ বড় দলের ছায়ায় আশ্রয় খুঁজছেন, আবার কেউ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার চিন্তায় ব্যস্ত।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, বিএনপি চায় আমরা জামায়াতের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই না যাই। এজন্য তারা অন্তত ২০টি আসনে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ মন্ত্রিসভায় অংশীদার হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে।

তবে এনসিপি এখনো এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিক্রিয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এনসিপির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে, তবে জোট হবে কি হবে না, সেটা এখনই বলা যায় না। রাজনীতির বাস্তবতায় মাঠের পরিস্থিতিই তা নির্ধারণ করবে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীও এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এনসিপির নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে। তবে এনসিপি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে— তারা স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা এনসিপিকে নিয়ে জোট করব— এমন কিছু বলিনি। তবে রাজনৈতিক যোগাযোগ তো থেকেই যায়।

সূত্র জানায়, জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা, গণভোট ও উচ্চকক্ষের কাঠামো নিয়ে মতবিরোধের পর বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব তৈরি হয়। এর মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কড়া মন্তব্যে সম্পর্ক আরও শীতল হয়।

দলীয় নেতারা জানান, আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, ডা. তাসনিম জারা, আরিফুল ইসলাম আদিব, সামান্থা শারমিন ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ বেশ কয়েকজন নেতা ঢাকাসহ বিভিন্ন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

তাছাড়া সদস্য সচিব আখতার হোসেন (রংপুর), সারজিস আলম (পঞ্চগড়), হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা) নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। দল ছাড়িয়ে আসা দুই সাবেক ছাত্রনেতার জন্যও বিশেষ পদ ও আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, নাহিদ ইসলাম— ঢাকা-৯ বা ১১ (সবুজবাগ-মতিঝিল-ডেমরা), আদিব— মিরপুর, তাসনিম জারা— ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ), নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী— উত্তরা, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত— ঢাকা-১৯, আসাদুল ইসলাম মুকুল— ঢাকা-২০, খান মো. মোরসালিন— ঢাকা-৬

এছাড়া রাজধানীর আরও কয়েকটি আসনে দলের নেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলীয় বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে তেমন পরিবর্তন আসেনি। “হাট-মাঠ-ঘাট” দখলের সংস্কৃতি আগের মতোই চলছে। অথচ জুলাইয়ের উত্তাল গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশায় জীবন উৎসর্গ করেছিল।

দলের একাংশ মনে করে, জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে এনসিপিকে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে থেকে নতুন ধারা গড়ে তুলতে হবে। স্টাবলিশমেন্টের প্রভাব কাটিয়ে ওঠাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তাদের মতে, এনসিপি যদি ক্ষমতার রাজনীতিতে গা ভাসায়, তবে দলটির অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। তাই তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ— এই নির্বাচনে এনসিপি নিজস্ব পরিচয় ও অবস্থান অক্ষুণ্ণ রেখেই মাঠে নামবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন