গণভোটের প্রস্তুতি নিতে ইসির নির্দেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন গণভোট আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইসি সচিবালয় জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এবং কর্মকর্তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, বাজেট ও জনবল বরাদ্দের বিষয়টি আগে থেকেই বিবেচনায় রাখতে হবে। অন্যদিকে, যদি দুইটি ভোট পৃথক দিনে হয়, তবে ব্যয় ও লজিস্টিক ব্যবস্থার জন্য আলাদা অর্থ সংস্থানের প্রয়োজন হবে।

বৈঠকে অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহসহ ইসির অন্যান্য সদস্যরা। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, পররাষ্ট্র, অর্থ, আইন ও বিচার বিভাগসহ ৩১টি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সচিব ও প্রধান কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনকালীন সময়ে মাঠ প্রশাসন হেলিপ্যাডগুলো সংস্কার করবে, যাতে দুর্গম এলাকায় দ্রুত যাতায়াত সম্ভব হয়।

পাশাপাশি সম্ভাব্য অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব টিমে একজন চিকিৎসক, নার্স ও প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ থাকবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সিসি ক্যামেরা সচল রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়, যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নথিবদ্ধ থাকে এবং পরবর্তীতে অনিয়ম শনাক্ত করা যায়।

এছাড়া যেসব স্কুল বা কলেজে ভোটকেন্দ্র স্থাপন হবে, সেগুলোর প্রবেশপথ ও আশপাশের রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণা ও জনসচেতনতা কার্যক্রমে সংসদ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে ভোটারদের সচেতন করতে বিটিভি নিউজ ও ফ্ল্যাশ বার্তা সম্প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বৈঠকে সিইসি সচিবদের উদ্দেশে বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে বা আলাদা দিনে হবে কিনা, তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

তবে এখন থেকেই সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুতি রাখতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, সরকারি সফরে কোথাও গেলে স্থানীয় নির্বাচনি প্রস্তুতির বিষয়েও খোঁজ নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যদি একই দিনে দুটি ভোট অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কেন্দ্র ও কর্মী সংখ্যা বাড়বে। তাই আগাম প্রস্তুতি জরুরি।

তিনি অর্থ বিভাগের সচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, দুই ভোট একসঙ্গে হলে ব্যয় বাড়বে—সেই অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা আগেই করতে হবে, যেন সময়মতো ছাড় দেওয়া যায়।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, গণভোটের সময় নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের হাতে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। সেই সময়সূচি অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার সময় নির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও শিক্ষা অধিদপ্তরকে সক্রিয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির আবহাওয়া অনুকূল হলেও, আগেভাগেই ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা দরকার।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে, যেখানে সরকারি শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তারা থাকবেন।

নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিরপেক্ষ শিক্ষকের তালিকা তৈরিতে সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যকর নিয়োগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, প্রবাসী ভোটার, সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচনি কাজে নিয়োজিতদের জন্য নতুন পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালুর কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পোস্টাল ভোটিংয়ের ট্রায়াল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা ১৬ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে।

তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তা ও তথ্য বিকৃতি রোধে ইসি একটি এআই-নির্ভর মনিটরিং সেল গঠনেরও পরিকল্পনা করছে। এই সেল ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শনাক্ত ও প্রতিরোধে কাজ করবে।

সভায় বাজেট সংক্রান্ত আলোচনায় অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব মন্ত্রণালয়কে সংযত থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে কাজ সম্পাদনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

পরিশেষে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো—যেকোনো পরিস্থিতিতেই একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যেই এখন থেকেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।