

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজশাহীর সুরশুনিপাড়ায় ৩০শে অক্টোবর দিনব্যাপী মাতৃভাষার মাধ্যমে বহুভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের আন্তঃশেখা বিনিময় ও পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে । বেসরকারি অলাভজনক উন্নয়নমূলক সংস্থা ন্যাশনাল এজেন্সী ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন সংস্থার আয়োজনে এ প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইনিস্টিটিউট অফ এডুকেশন এন্ড রিসার্চ এর প্রফেসর ড. হ্যাপী কুমার দাস ।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি, বাংলাদেশ এর এডুকেশন কো-অর্ডিনেটর ফৈবী ছিরিং মারাক, প্রোগ্রাম অফিসার জেমস কিস্কু, মুন্ডুমালা মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সুনিল কুমার মাঝি, মাসাউস সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মেরিনা হাঁসদা প্রমুখ। মাতৃভাষার মাধ্যমে বহুভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের আন্তঃশেখা বিনিময় ও পরিদর্শন প্রোগ্রামে সভাপতিত্ব করেন এনএজিআর (ন্যাশনাল এজেন্সী ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন) সংস্থার নির্বাহী পরিচালক স্টেফান সরেন।
বাংলাদেশে বৈচিত্র্যময় নানা ভাষা ও সংস্কৃতির আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস। আদিবাসীরা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। এনএনজিআর (ন্যাশনাল এজেন্সী ফর গ্রিণ রিভ্যূলেশন) সংস্থাটি উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায় আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানউন্নয়নে প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে।
এনএজিআর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে সাঁওতাল শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা দান করা হচ্ছে। এই শিক্ষা কার্যক্রমটি মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি, বাংলাদেশ এর অর্থায়নে বহুভাষা শিক্ষা কার্যক্রম এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত করছে। এ ছাড়াও ন্যাশনাল এজেন্সী ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন সংস্থার নিজস্ব সহায়তায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বসবাসকারী বিপন্ন প্রায় কোল জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে।
বিভিন্ন সময়ে সরকার আদিবাসী ছয়টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের (সাঁওতাল, উরাও, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ও গারো) জন্য প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ের মাতৃভাষার বই তৈরি পদক্ষেপ গ্রহন করলেও। সাঁওতালি ভাষায় বই প্রস্তুতকরনে বর্ণ জটিলতায় আটকে জায়গায়। কিন্তু থেমে থাকেনি আদিবাসী সাঁওতাল শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা। বেসরকারি অলাভজনক উন্নয়নমূলক সংস্থা ন্যাশনাল এজেন্সী ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সাঁওতাল শিশুদের প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করছে। এছাড়াও মাসাউস নামক বেসরকারি সংস্থা মাহালে সম্প্রাদয়ের শিশুদের প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে মাহালে ভাষায় শিক্ষা প্রদান করছে।
প্রধান অতিথি প্রফেসর হ্যাপি কুমার দাস বলেন " প্রত্যেক মানুষ তার নিজ মাতৃভাষা ভাষা ছাড়া বেশি দূর এগুতে পারে না। আমি যত দূর এগুতে পেরেছি তা আমার বাংলা ভাষার জন্যই হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি আদিবাসী শিশুরা তাদের নিজ মাতৃ ভাষায় যদি শিখতে পারে তবে তাদের উন্নয়ন খুব সহজেই হবে। আমি চাই আপনারা লেখাপড়া করে শিখুন, আপনাদের এই মাতৃভাষা শিক্ষা খুব ভালো একটা উদ্যোগ। আপনাদের এমন কাজে আমার যদি কোন সহযোগিতা লাগে তবে আমও আপনাদের পাশে আছি।
ন্যাশনাল এজেন্সী ফর গ্রিন রিভ্যুলেশন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক স্টেফান সরেন বলেন আমাদের স্বপ্ন একদিন প্রতিটি সাঁওতাল গ্রামে এই প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহনের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিলুপ্ত প্রায় ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী যাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে তাদের ভাষা বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাদের শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহন জরুরী। এছাড়াও আদিবাসী সমাজে মাদক ও বাল্যবিবাহ মুক্ত সমাজ গড়ার প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিববর্তন ও মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এনএজিআর এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার প্রদীপ হেমব্রম জানান- “অত্র সংস্থার মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শুধু ভাষায় নই এদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষন ও চর্চার জন্য সকলকে উৎসাহিত করছে। আমারা চাই ভাষা ও সংস্কৃতি বাঁচুক সকলের সহযোগিতায়। এছাড়া আদিবাসী সমাজে বাল্যবিবাহ রোধ মাদক এর কুফল নিয়ে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করছে।”
মাতৃভাষার মাধ্যমে বহুভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের স্কুল সুপারভাইজার নেলসন হাঁসদা বলেন-“যারা এই জাতীয় সমসমনা প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদের শিখন পদ্ধতি, স্কুল কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি সহযোগিতা অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে ভাষা শিক্ষাকার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ায় আমাদের লক্ষ্য।”
মাতৃভাষার মাধ্যমে বহুভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়ার পথ থেকে আমাদের ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রকৃতপক্ষে সরকারকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। আমাদের মাঝে বেঁচেঁ থাকুক ভাষা বেঁচেঁ থাকুক বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি।
মন্তব্য করুন