

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


গতকাল শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। বর্তমানে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাদিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন একটি লেখা দিয়েছেন ঝালকাঠি–১ আসন থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. মাহমুদা মিতু। কয়েক দিন আগেই বেইলি রোডে হাদির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। সেই স্মৃতি, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাওয়ার মুহূর্ত এবং পরবর্তী মানসিক অবস্থার কথা তিনি তুলে ধরেছেন নিজের লেখায়।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, হাদি বর্তমানে সহায়তাপ্রাপ্ত ভেন্টিলেশনে আছেন। অর্থাৎ তিনি নিজে থেকে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছেন, আর যন্ত্র সেই শ্বাসপ্রশ্বাসকে সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি লেখেন, গুলির খবর পাওয়ার পর দুপুর ২টা ৪৪ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে এক মুহূর্তের মধ্যেই একটি ব্যাটারি রিকশায় উঠে পড়েন। সেদিন কোথাও যানজট না থাকলেও তার কাছে মনে হচ্ছিল মালিবাগ থেকে ঢাকা মেডিকেল যেন শেষ না হওয়া এক দীর্ঘ পথ। হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন হাদির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, সিপিআর দিয়েও তখন পালস ফিরছিল না। চোখে পড়ছিল পিউপিল ডাইলেটেড। দ্রুত একে একে নিউরোলজি, ইএনটি, থোরাসিকসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা আসেন, শুরু হয় জরুরি অস্ত্রোপচার।
তার ভাষায়, মাথার এক পাশ খুলে চাপ কমানোর সঙ্গে সঙ্গেই হাদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্বাস নিতে শুরু করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ভেতরের চাপ অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এই পর্যায়ে এসে তিনি আর বিস্তারিত লিখতে পারছেন না বলেও জানান। একই সঙ্গে উল্লেখ করেন, অসংখ্য মানুষ তাকে ফোন করে আপডেট জানতে চাইছেন।
পরবর্তীতে প্রোটোকল মেনে হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার সময়ের অনুভূতিও তুলে ধরেন তিনি। সামনে গাড়িতে ছিলেন তিনি নিজে, ডা. আহাদ, ডা. তাসনিম জারা ও সালমান, আর পেছনে অ্যাম্বুলেন্স। সে মুহূর্তের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা তার জন্য কঠিন ছিল বলে জানান। বারবার ডা. জারা তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিলেন।
লেখার এক পর্যায়ে তিনি আবেগভরে লেখেন, মনে হচ্ছিল এমপি হওয়ার আগেই কীভাবে হাদি ভিআইপি প্রোটোকল পাচ্ছে! তার জন্য পুরো রাস্তা ফাঁকা, যাতে এক সেকেন্ডও দেরি না হয়। তিনি লিখেছেন, “হাদি, তুই তো এমপি-মন্ত্রীর থেকেও বড়।” ভিআইপিদের জন্য রাস্তা বন্ধ হলে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়, কিন্তু হাদির জন্য হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসিমুখে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি ছিল। অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার সময় হাসপাতালের দুই পাশে মানুষের মুখে মুখে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি সব মিলিয়ে তার নিজের পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল বলে লেখেন তিনি।
কয়েক দিন আগের এক ছোট্ট সাক্ষাতের কথাও তিনি স্মরণ করেন। ২৪ নভেম্বর হাদির সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তার আন্তরিকতা, যত্ন সবই মনে পড়ে যাচ্ছে। কেন সেদিন খাবার কিনে খাওয়াতে পারলেন না, কেন এত তাড়াহুড়া ছিল এই আক্ষেপ তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে বলে লেখেন তিনি। স্কুলের সামনে ছোট মেয়েদের হাদিকে দেখে বলা কথা “আমি বড় হলে হাদিকে ভোট দেব” এই কথাগুলোও তিনি হাদিকে জানাতে পারেননি বলে অনুশোচনা প্রকাশ করেন।
পোস্টের শেষাংশে তিনি লেখেন, মানুষ যখন মৃত্যুর মুখে পড়ে তখনই আমরা বেশি মায়া দেখাই, অথচ আগে কেন মনে রাখি না আমরা কেউই চিরস্থায়ী নই। হাদির প্রোফাইলে নিজের একটি ছবি দেখেই তার সমস্ত শক্তি যেন ভেঙে পড়ে। লেখার শেষ লাইনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের লাল পতাকার মাঝখান দিয়ে যেন একটি গুলি চলে গেছে, আর তিনি নিজে আর আগের মতো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন কি না, সেটাও জানেন না।
মন্তব্য করুন

