রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওসমান হাদিসহ কিলিং টার্গেটের তালিকায় আছেন যারা

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
ওসমান হাদি
expand
ওসমান হাদি

গতকাল শুক্রবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। বর্তমানে তিনি সংকটজনক অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পর সামনে এসেছে আরও উদ্বেগজনক তথ্য—শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জুলাই আন্দোলনের সংগঠককে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে সরকার আগেই সতর্কবার্তা পেয়েছিল তবে সে অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

সূত্রের দাবি অনুযায়ী, একটি তথাকথিত ‘টার্গেট কিলিং’ তালিকায় ওসমান হাদির পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের নামও ছিল। তালিকায় আরও কয়েকজন জুলাই সংগঠকের নাম থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক আইনজীবীর মাধ্যমে এসব সম্ভাব্য হামলার তথ্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকি ওসমান হাদি নিজে এবং আরও দুজন জুলাই সংগঠক সরাসরি সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে হুমকির বিষয়টি তুলে ধরেন। ওই আইনজীবীও আলাদাভাবে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা করেন।

সূত্র আরও জানায়, ওই আইনজীবী তার কাছে থাকা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও প্রমাণ সরকারের সামনে উপস্থাপন করেন এবং তথ্যের উৎস সম্পর্কেও ব্যাখ্যা দেন।

তিনি জানান, পেশাগত কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এসব স্পর্শকাতর তথ্য তার হাতে এসেছে। তিনি দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কার কথাও জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে হামলার আশঙ্কার তথ্য পেয়ে তারা সরকারকে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হয় না, বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করাও প্রায় অসম্ভব।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, ছোটখাটো অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত সবার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

আরও জানা যায়, হাদি, ফুয়াদ ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ জুলাই সংগঠকদের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর ওই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় আসেন। সেপ্টেম্বরে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে তখন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও মাঠের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় তারা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। বর্তমানে ওই আইনজীবী ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। হাদির ওপর হামলার ঘটনার পর তিনি জানান, বহু দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এসব তথ্য পেয়েছিলেন এবং বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাদির ওপর হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। অন্যদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি এখনো কাটেনি বলে তার আশঙ্কা।

এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং আইজিপি বাহারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে আইজিপি বাহারুল আলম খুদেবার্তায় জানান, এ ধরনের কোনো নির্দিষ্ট তথ্য তাদের কাছে ছিল না।

অন্যদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় বিদেশে অবস্থানরত অপরাধচক্র জড়িত থাকতে পারে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে ফিলিপ ওরফে ‘গারো ফিলিপ’ নামে এক ভাড়াটে ঘাতকের নাম সামনে এসেছে। তাকে আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। পুলিশ ধারণা করছে, ফিলিপকে গ্রেপ্তার করা গেলে এই কিলিং মিশনের নেপথ্যের মূল পরিকল্পনাকারীদের পরিচয় বেরিয়ে আসতে পারে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X