শুক্রবার
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে মুখোমুখি বিএনপি–জামায়াত

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
expand
গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে মুখোমুখি বিএনপি–জামায়াত

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়—গণভোট ও জুলাই সনদ। এই দুই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের দুই প্রভাবশালী দল বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর মধ্যে তৈরি হয়েছে দৃশ্যমান উত্তেজনা ও মতপার্থক্য। রাজনৈতিক মহল বলছে, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই “পয়েন্ট অব নো রিটার্নে” পৌঁছে গেছে।

বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট নয়। অন্যদিকে জামায়াতের দাবি, নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। তাদের বক্তব্য, যদি সাধারণ পদ্ধতিতে সমাধান না আসে, তবে ‘আন্দোলনের মাধ্যমে’ পথ বের করা হবে। এজন্য তারা সরকারকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে—দাবি না মানলে ঢাকায় “ভিন্ন চিত্র” দেখা যাবে।

জুলাই সনদ ও এর সংস্কার ইস্যুতেও দুই দলের অবস্থান একেবারে বিপরীতমুখী। বিএনপি বলছে, ১৭ অক্টোবরের ঐকমত্য বৈঠকে সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে যে সনদে সই হয়েছে, সেটিকে সামনে রেখেই অগ্রসর হতে হবে। তারা অভিযোগ করেছে, “৮৩ কোটি টাকা খরচ করে ঐকমত্য কমিশন কেবল মিটিং আর আপ্যায়নেই সময় কাটিয়েছে।” বিএনপির ভাষায়, সরকার এখন সাত দিনের মধ্যে মতপার্থক্য নিরসনের কথা বলছে, যা তারা ‘রাজনৈতিক তামাশা’ হিসেবে দেখছে।

অন্যদিকে জামায়াতের দাবি—সনদের আইনি বৈধতা অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকা সত্ত্বেও, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে তারা মত দিয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও কটাক্ষ বাড়ছে। পাল্টা বক্তৃতায় একে অপরকে দায়ী করা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য।

বৃহস্পতিবার যশোরে এক স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। যদিও তিনি সরাসরি কোনো দলের নাম নেননি, তার বক্তব্যে ইঙ্গিত ছিল জামায়াতের প্রতি।

অন্যদিকে জামায়াত নেতারা বিএনপিকে ‘সংস্কার প্রশ্নে অনিশ্চিত’ এবং ‘গণআন্দোলনের চেতনা থেকে দূরে সরে যাওয়া’ বলে অভিযুক্ত করছেন। তাদের মতে, বিএনপি মৌলিক সংস্কার বিষয়ে দ্ব্যর্থতার আশ্রয় নিয়েছে এবং ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করবে না এমন আশঙ্কা রয়েছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এতে আট দলীয় জোটের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর আগে বেলা ১২টায় পল্টন থেকে এক মিছিল বের হয়, যেখানে নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “দাবি আদায়ে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে—সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব।

স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর মৎস্য ভবন মোড়ে এক ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ১১ নভেম্বরের মধ্যেই সরকারকে আমাদের দাবিগুলো মানতে হবে, নতুবা রাজধানীতে মহাসমাবেশ হবে, আর সেদিন ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে এই বিভক্তি জুলাই বিপ্লবের আদর্শে বিশ্বাসী দলগুলোর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ফাটল তৈরি করছে। তাদের আশঙ্কা, দ্রুত সমঝোতায় না পৌঁছালে এ বিরোধ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে।

এমনকি, সমঝোতার সাত দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর যদি সরকার একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাতেও পরিস্থিতি আরও সংকটমুখী হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত। তারা মনে করছেন, এখন সরকারের দায়িত্ব হলো সংলাপের মাধ্যমে সব দলের মধ্যে আস্থা তৈরি করা, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মতো নির্বাচনমুখী দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বকে আলোচনায় বসানো।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক জোটে না গেলেও, দলটি প্রকাশ্যে জানিয়েছে যে তারা নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি বৈধতা চায়। ফলে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে এনসিপির অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন