রবিবার
০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‎আমন ধানের ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ, দিশেহারা কৃষক ‎ ‎

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ‎
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০৯ পিএম
‎কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার আমন ধানের ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ কারেন্ট পোকার আক্রমণ। ছবি: এনপিবি
expand
‎কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার আমন ধানের ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ কারেন্ট পোকার আক্রমণ। ছবি: এনপিবি

‎কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার আমন ধানের ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ কারেন্ট পোকার আক্রমণ। এতে মাঠজুড়ে নেমে এসেছে হতাশা ও উদ্বেগের ছায়া।

বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও সুফল না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার হাজারো কৃষক। বিশেষ করে ধানের শীষ বের হওয়ার সময় এ পোকার আক্রমণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

‎জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে, তবে চাষ হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ হেক্টরে -যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ১০০ হেক্টর বেশি। অতিরিক্ত গরম ও অনিয়মিত আবহাওয়ার কারণে কারেন্ট পোকা এবং গোড়া পচন রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

‎অধিদপ্তর জানায়, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন মোবাইল ফোনে, সরাসরি মাঠে এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে। কিন্তু অধিকাংশ কৃষক কৃষি অফিসের পরামর্শ না নিয়ে স্থানীয় দোকানদারের দেওয়া ওষুধ ব্যবহার করছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ‎ ‎সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলার বেশিরভাগ আমন খেতে কারেন্ট পোকার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণে ধানের পাতা ও শীষ আগুনে পুড়ে যাওয়া রঙ ধারণ করছে। দিনের বেলায় ভালো দেখালেও রাতারাতি গাছ শুকিয়ে বাদামি হয়ে যাচ্ছে। অনেক কৃষক একাধিকবার কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। ‎ ‎দমালগ্রামের কৃষক মো. মতিন বলেন, ‎“প্রতিবছর তিনবার ওষুধ ছিটালেই কাজ হয়ে যায়। কিন্তু এবার এখনো ধানের শীষ বের হয়নি, তবুও তিনবার স্প্রে করতে হয়েছে। এরপরও কাজ হচ্ছে না। কতবার স্প্রে করতে হবে বুঝতে পারছি না।” ‎ ‎রতনপুরের কৃষক আবুল মিয়া জানান, ‎কারেন্ট পোকার পাশাপাশি খোল পচা রোগও দেখা দিয়েছে। কীটনাশক ছিটিয়েও ফসল পোকামুক্ত হয়নি। গোড়ায় পচন ধরেছে, ওষুধ কাজ করছে না।” ‎ ‎একাধিকবার বালাইনাশক স্প্রে করায় কৃষকদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতি বিঘায় ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। এতে ধানের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, ফলে লাভের পরিবর্তে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। ‎ ‎জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‎প্রতি বছরই আমন ক্ষেতে কিছু পোকার আক্রমণ দেখা যায়। কিন্তু এবারের গরম ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে আক্রমণটা কিছুটা বেশি।

কৃষকেরা যদি সঠিকভাবে ও সময়মতো পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করতেন, তবে এত সমস্যা হতো না। অনেকে ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তাকে না জানিয়ে সরাসরি দোকানদারের কাছ থেকে সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন। এতে পোকা দমন না হয়ে বরং বেড়েছে।” ‎ ‎তিনি আরও বলেন “যেসব কৃষক আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করেছেন, তাদের জমিতে পোকার আক্রমণ কম। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিচ্ছি।”

‎কুড়িগ্রামের অধিকাংশ খেতে এখন ধানের শীষ বের হয়েছে। ঠিক এমন সময় পোকা ও রোগের আক্রমণ উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা কৃষি কর্মকর্তাদের। সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে জেলার আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে। ‎

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন