রবিবার
০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৩ নভেম্বরকে ঘিরে উত্তেজনা

সোমবার থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে ব্যাপক অভিযান

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৯ এএম
বাংলাদেশ পুলিশ।
expand
বাংলাদেশ পুলিশ।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ও অপতৎপরতার তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে—যার মধ্যে রয়েছে গণসমাবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি, লকডাউন জারি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের প্রচারণা।

যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এখনো কোনো নির্দিষ্ট হুমকির তথ্য নেই, তবু এসব অনলাইন তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি, চলছে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্রাইম ইউনিটে অভিযান জোরদার করা হয়েছে, নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীদের গ্রেফতারে প্রযুক্তিগত নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, সোমবার থেকেই শুরু হবে বড় পরিসরের অভিযান। আওয়ামী লীগের তৎপরতা ঠেকাতে মাঠে নামবে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কিছু রাজনৈতিক দলও।

পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, ১৩ নভেম্বর ঘিরে বড় কোনো সহিংসতার নির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর অপপ্রচার চলছে।

তিনি বলেন, আমরা এসব তথ্যকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। পুলিশ এখন শক্ত অবস্থানে আছে। তার ভাষায়, রাজধানীসহ সারাদেশে চেকপোস্ট বৃদ্ধি, তল্লাশি জোরদার এবং অভিযান আরও গতিশীল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলমান অভিযানের গতি ১০ নভেম্বর থেকে আরও বাড়ানো হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছি। বিভিন্ন মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যে কিছু কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন অভিযান চলছে।

তিনি আরও জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। গত ১৪ মাসে বিভিন্ন উপায়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা তারা করেছে, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। এখন তারা বাসে অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার নাশকতা পরিকল্পনায় যুক্ত ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে এখন বড় ধরনের নাশকতা চালানো সম্ভব নয়, তবে ফেসবুক ও ইউটিউবে নানা ধরণের পোস্ট নজরে এসেছে। তিনি আরো জানান, এসব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, ১৩ নভেম্বরের আগে থেকে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের তালিকা অনুযায়ী পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয় এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকার প্রবেশপথ, হোটেল, মেস ও বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোয় বিশেষ তল্লাশি অভিযান শুরু হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো আমলে নিয়ে আমরা কাজ করছি। নিষিদ্ধ সংগঠন যাতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি চলছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, “ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের গোয়েন্দা ও সাইবার মনিটরিং টিম সক্রিয় রয়েছে। যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো আশঙ্কা নেই, তবু র‌্যাব সদস্যরা প্রস্তুত আছে।

তিনি জানান, অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন, টহল জোরদার এবং চেকপোস্ট বৃদ্ধি নিয়ে কাজ চলছে। ১০ নভেম্বর থেকে মাঠপর্যায়ে তা কার্যকর হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন