

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ভারতের বিহার রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় দুগ্ধদায়ী মায়ের বুকের দুধে ইউরেনিয়াম (ইউ-২৩৮) শনাক্ত হয়েছে-সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য। গবেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মায়ের দুধের মাধ্যমে নবজাতকরা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ‘নন-কারসিনোজেনিক’ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের পরিচালিত গবেষণায় ৪০ জন দুগ্ধদায়ী মায়ের দুধ পরীক্ষা করা হয় এবং প্রতিটি নমুনাতেই ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
গবেষণার সহ-লেখক ও এআইআইএমএস নয়াদিল্লির চিকিৎসক ড. অশোক শর্মা এএনআইকে জানান, পরীক্ষায় দেখা গেছে—শিশুদের ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে HQ>1; অর্থাৎ স্তন্যদুগ্ধের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম এক্সপোজার থেকে সম্ভাব্য নন-কারসিনোজেনিক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যদিও তিনি বলেন, মোট ইউরেনিয়ামের পরিমাণ অনুমোদিত সীমার নিচে এবং বাস্তবে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ সময় ধরে ইউরেনিয়াম এক্সপোজার শিশুদের কিডনি বিকাশ, স্নায়ুবিক বৃদ্ধি, জ্ঞানীয় ক্ষমতা ও মানসিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা যায়, বিহারের জেলা খাগাড়িয়ায় সর্বোচ্চ গড় দূষণ শনাক্ত হয়েছে এবং সর্বোচ্চ একক মাত্রা রেকর্ড হয়েছে কাটিহারে। তবে বিশেষজ্ঞরা একমত—শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই; তাই কোনো চিকিৎসাগত কারণ ছাড়া বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।
গবেষকদের মতে, মায়ের দেহে প্রবেশ করা অধিকাংশ ইউরেনিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়; দুধে জমার হার তুলনামূলক কম। ড. অশোক শর্মা জানান, ভারতে অন্যান্য রাজ্যেও ভারী ধাতু ও দূষকের উপস্থিতি নিয়ে একই ধরনের গবেষণা চলছে, যা ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের ১৮টি রাজ্যের ১৫১টি জেলায় ভূগর্ভস্থ জলে ইউরেনিয়াম দূষণের প্রমাণ মিলেছে। শুধু বিহারেই প্রায় ১.৭ শতাংশ পানিতে ইউরেনিয়াম শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পানিতে ইউরেনিয়ামের গ্রহণযোগ্য সীমা রেখেছে প্রতি লিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম; জার্মানির মতো দেশে এ সীমা আরও কঠোর—১০ মাইক্রোগ্রাম।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, শিশুদের ইউরেনিয়াম নির্গমনের ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় তারা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
ভবিষ্যৎ গবেষণা প্রসঙ্গে ড. অশোক জানান, ইতোমধ্যে দুধে আর্সেনিক, সীসা ও পারদের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। সামনে কীটনাশকসহ অন্যান্য পরিবেশদূষকের উপস্থিতিও বিস্তৃতভাবে পরীক্ষা করা হবে। নবজাতকের ঝুঁকি নিরূপণে নিয়মিত বায়োমনিটরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন
