

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মাত্র দেড় দিনের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল একদিনে ৩ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় আরও তিনটি কম্পন রেকর্ড হয়—যার একটি নরসিংদীতে এবং বাকি দুটি রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরবর্তী কম্পন বা ‘আফটারশক’ সম্ভাব্য বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেন, বৃহৎ ভূমিকম্প সাধারণত সেইসব অঞ্চলে ঘটে, যেখানে এক টেকটনিক প্লেট আরেকটির নিচে সরে যায়—যা সাবডাকশন জোন নামে পরিচিত।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ঢাকা শহরের অবস্থান এ ধরনের জোনের খুব কাছেই। তাদের দাবি, ভূগর্ভে শক্তি সঞ্চিত থাকার কারণে বড় কম্পনের জন্য পরিবেশ এখন অনুকূল হয়ে আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলো সাধারণত এসব সাবডাকশন জোনে ঘটে থাকে। তাই আতঙ্ক নয়, প্রস্তুতি—এটাই এখন মূল কথা। ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমাতে ভবনগুলোকে ৭–৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল করে নির্মাণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।
পাশাপাশি সংকীর্ণ রাস্তা এড়িয়ে প্রশস্ত সড়ক পরিকল্পনা করা এবং অনিয়মে তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্রুত শনাক্ত করা জরুরি বলেও বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন।
শুক্রবারের শক্তিশালী কম্পনের পর মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত। এরপর স্বল্প সময়ে পরপর আরও কয়েকটি ভূমিকম্প হওয়ায় অনেকে আশঙ্কা করছেন—বড় কোনো ভূমিকম্প কি সামনে অপেক্ষা করছে?
শক্তিশালী কম্পন হলে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, সেবা–সংস্থাগুলো কতোটা সাড়া দিতে পারবে—এসব নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
জনমনে শঙ্কা দূর করতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরছেন।
তাদের মতে, জরুরি প্রস্তুতি, মহড়া, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন এখন সময়ের দাবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশ তিনটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
দেশের পূর্বদিকে ইন্ডিয়ান প্লেট বার্মিজ সাবপ্লেটের নিচে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে; আবার উত্তরে ইন্ডিয়ান প্লেট তলিয়ে যাচ্ছে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে।
এসব মিলেই তৈরি হয়েছে দীর্ঘ একটি সাবডাকশন জোন, যা সিলেট থেকে শুরু হয়ে টেকনাফ হয়ে জাভা–সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চল ঢাকার খুব নিকটেই হওয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি প্রকৃতপক্ষে উচ্চমাত্রার।
তিনি আরও বলেন, উত্তর দিকের ডাউকি ফল্ট এবং ঢাকার আশপাশের মধুপুর অঞ্চলেও একাধিক ফল্টলাইন আছে।
এমনকি শীতলক্ষ্যাকে পর্যন্ত ফল্ট–নিয়ন্ত্রিত বলে ধরা হয়। ইতিহাসেও দেখা গেছে, এসব অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটেছে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ আর্থকোয়াক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ড. মেহেদী আহমেদ আনসারীর মতে, নরসিংদী ও ঢাকায় একের পর এক ছোট কম্পন উদ্বেগজনক। এগুলো বড় ভূমিকম্পের আগাম সংকেত—ফোরশক—হতে পারে।
আগামী দুই–তিন দিন পর্যবেক্ষণ জরুরি। এ সময়ের মধ্যে আবারও ছোট ভূমিকম্প হলে বড় কম্পন আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ঢাকা ও আশপাশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ঘন ঘন ছোট ভূমিকম্প মানুষের মানসিক চাপ বাড়ায় এবং ইতোমধ্যেই অনেকে শারীরিক–মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
তিনি জানান, ডাউকি ফল্টই ঢাকার প্রধান ভূমিকম্প উৎস। বড় ভূমিকম্প ঢাকায় না হলেও আশপাশের এলাকায় শক্তিশালী কম্পন হলে সেটিও রাজধানীতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে।
মন্তব্য করুন