

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


নরসিংদীর মাধবদীতে শুক্রবার যে ভূমিকম্প অনুভূত হলো, তা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে নড়বড়ে এক এলাকা। ভূমিকম্প আগে থেকে জানানো সম্ভব নয় বলে প্রস্তুতি না থাকলে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক হতে পারে।
শনিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতি এই উদ্বেগ তুলে ধরে। বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক বদরুল ইমাম এবং সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার জাহিদ স্বাক্ষর করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে মাধবদীতে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০ কিলোমিটার নিচে মাঝারি মাত্রার কম্পন সৃষ্টি হয়। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ৫.৫ থেকে ৫.৭ এর মধ্যে ছিল।
কম গভীরতার কারণে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও স্পষ্টভাবে কম্পন টের পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রাণহানি ঘটেছে ১০ জনের; ঘরবাড়ি ও স্থাপনায় ফাটলসহ বহু ক্ষতির খবর এসেছে।
সমিতি জানায়, এ অঞ্চল ইন্দো–বার্মা টেকটোনিক সিস্টেমের সক্রিয় অংশে অবস্থিত। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র শীতলক্ষ্যা নদীর পাশের একটি সক্রিয় ফল্ট লাইনের কাছে। ফলে ভবিষ্যতে একই রকম বা আরও বড় কম্পন ঘটার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
তাদের মতে, দেশের লুকানো ফল্টগুলো দ্রুত শনাক্ত করে জাতীয় ঝুঁকি মানচিত্রে সংযোজন প্রয়োজন। বিশেষ করে জনসংখ্যা–ঘন ঢাকা শহরের জন্য মাইক্রোজোনেশন অত্যন্ত জরুরি।
বিবৃতিতে আরও ব্যাখ্যা করা হয়, বাংলাদেশের ভূগঠন অত্যন্ত জটিল। ভারতীয় প্লেট দীর্ঘদিন ধরে বার্মা প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। এই ঠেলাঠেলিই চট্টগ্রাম–সিলেট অঞ্চলের পাহাড় তৈরি করেছে। চাপ এখনও কমেনি; বরং সময়ের সাথে জমে উঠছে। চাপের গতি–প্রকৃতি বোঝার জন্য নতুন জরিপ প্রয়োজন।
সমিতি আবারও মনে করিয়ে দেয়—ভূমিকম্পের আগে শনাক্ত করার কোনো নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি নেই। কয়েক সেকেন্ডেই দুর্বল ভবন ভেঙে পড়তে পারে। তাই আগাম প্রস্তুতি, নিয়মিত মহড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতা—এসবই ক্ষতি কমানোর কার্যকর উপায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ভূমিকম্প–প্রবণ অঞ্চলের কাছে হওয়ায় মাঝেমধ্যে কাঁপুনি অনুভূত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আতঙ্ক বা গুজব নয়—সঠিক তথ্যই নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে জরুরি।
সমিতির মূল্যায়ন অনুযায়ী, শুক্রবারের ভূমিকম্প ভূঅভ্যন্তরের চাপ কমিয়েছে, এমন ধারণা করা ঠিক হবে না। বরং চাপ আরও জমছে এবং ভবিষ্যতে বড় কম্পন ঘটার শঙ্কা রয়েছে। দেশের ভেতরের মধুপুর ও ডাউকি ফল্ট, বাইরের প্লেট বাউন্ডারি ও আরাকান সাবডাকশন জোন—সবই বড় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য উৎস।
আগামী অনেক বছর ধরেই এ ঝুঁকি থাকবে। এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন বার্তা দিয়েছে এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য জরুরি প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করেছে। ভূমিকম্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ভূতত্ত্ববিদদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা এখন সময়ের দাবি।
মন্তব্য করুন
