বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে ভারত, কি করবে পাকিস্তানে?

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
expand
নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে ভারত, কি করবে পাকিস্তানে?

ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার করতে রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার এই উদ্যোগে প্রায় ১০ হাজার কোটি রুপি ব্যয় হবে বলে জানা গেছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভারতের হাতে থাকা এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম-এর অংশ হিসেবে যুক্ত হবে, যা শত্রুপক্ষের ছোড়া মিসাইল, ড্রোন ও যুদ্ধবিমানসহ নানা আকাশ হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম।

প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী এস-৪০০ ব্যবস্থার মাধ্যমে কয়েকটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ও একটি নজরদারি বিমানকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল। ফলে এই সিস্টেম কার্যকরভাবে কাজ করছে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।

২০১৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ভারতের জন্য মোট পাঁচটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন সরবরাহের কথা। এর মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যেই ভারতের হাতে এসেছে ও সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চতুর্থ স্কোয়াড্রনের সরবরাহ বিলম্বিত হয়েছে।

ভারত এখন নতুন এস-৪০০-এর পাশাপাশি আরও উন্নত এস-৫০০ সিস্টেম যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। দুই দেশের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি, ভারত ব্রহ্মোস সুপারসনিক মিসাইল ও এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল উন্নয়নের প্রকল্পও এগিয়ে নিচ্ছে।

২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ কাউন্সিলের বৈঠকে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। অনুমোদন পেলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন সংখ্যা আরও বাড়বে, যা দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা কাঠামোকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের সামরিক পরিকল্পনায় নতুন চাপ সৃষ্টি করবে। আকাশপথে আগ্রাসন চালানো এখন তাদের জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের লক্ষ্য কেবল শত্রু প্রতিরোধ নয়—বরং যেকোনো হঠাৎ আক্রমণের সময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর সক্ষমতা অর্জন করা।

এস-৪০০ সিস্টেম একাধিক টার্গেট একসঙ্গে শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে। এটি রাডারের মাধ্যমে শত শত কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুপক্ষের মিসাইল, বিমান বা ড্রোন ট্র্যাক করে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা একে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এস-৪০০ ও ভবিষ্যতে যুক্ত হতে যাওয়া এস-৫০০ ব্যবস্থা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনেরও মাধ্যম। এটি দীর্ঘ দূরত্বে নজরদারি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সুযোগ দেবে, যা সীমান্ত সংঘাতে ভারতের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।

এস-৪০০ এর পাশাপাশি ভারত আধুনিক রাডার, ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি যুক্ত করছে। এর ফলে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা হবে আরও সমন্বিত ও প্রতিক্রিয়াশীল।

কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হলে আকাশে ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি দ্বিগুণ হবে, এবং ভবিষ্যতে যেকোনো শত্রু আগ্রাসন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ভারতের এই উদ্যোগ কেবল সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পদক্ষেপ নয়—এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নতুন অধ্যায়ও বটে। এস-৪০০ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারলে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা দক্ষিণ এশিয়ায় এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে, যা পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী প্রতিপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন