শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেভাবে জানবেন আপনার মোবাইল ফোনটি বৈধ 

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২০ পিএম
মোবাইল ফোন
expand
মোবাইল ফোন

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধে আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালু করা হচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার(এনইআইআর) সিস্টেম। এর ফলে দেশের নেটওয়ার্কে নিবন্ধনহীন বা আনঅফিসিয়াল মোবাইল সেটের ব্যবহার বন্ধ হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর বিটিআরসি ভবনের বোর্ডরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালুর ফলে প্রতিটি মোবাইল ডিভাইস এমএফএস অনুযায়ী নিবন্ধিত থাকবে। কোন অবৈধ মোবাইল সেট ব্যবহার করে একাধিক সিম চালানো সম্ভব হবে না। এতে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সংগঠিত সিম ক্লোনিং, ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও লেনদেনে জালিয়াতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

তিনি আরও বলেন, ইকেওয়াইসি যাচাই প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার জন্য প্রত্যেকটি আইএমইআই নির্দিষ্ট এনআইডি ও সিমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ফলে ইকেওয়াইসি সিস্টেমে ভুয়া বা একাধিক নিবন্ধন করা সম্ভব হবে না। এটি আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, এছাড়া সিম প্রতারণা ও স্ক্যাম প্রতিরোধের জন্য চুরি বা হারানো ফোনের আইএমইআই ব্লক করে দিলে সেই ফোনে কোন নতুন সিম ব্যবহার করা যাবে না।

ফলে প্রতারকরা হারানো ফোন ব্যবহার করে আর স্ক্যাম বা ওটিপি জালিয়াতি করতে পারবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

টেলিকম সেক্টরে নিরাপত্তা ও রাজস্ব সুরক্ষা বিষয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, এনইআইআর ব্যবস্থা চালু হলে অবৈধভাবে আমদানিকৃত বা নকল মোবাইল সেট ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হবে। এর ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশে মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরো সুরক্ষিত হবে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের টেলিকম খাত একটি নতুন, নিরাপদ ও স্বচ্ছ যুগে প্রবেশ করবে।

এই উদ্যোগ সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে এবং বৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার জন্য উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন অপারেটরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কীভাবে জানবেন মোবাইল ফোনটি বৈধ কিনা

ধাপ-১: মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD<space> ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখুন। উদাহরণস্বরূপ KYD 123456789012345।

ধাপ-২: আইএমইআই নম্বরটি লেখার পর ১৬০০২ নম্বরে পাঠিয়ে দিন।

ধাপ-৩: ফিরতি বার্তার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের বৈধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল ফোনের নিবন্ধন

বিদেশ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল ফোন প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে। দাখিল করা তথ্য যাচাই–বাছাইয়ের পর শুধু বৈধ মোবাইলফোন নেটওয়ার্কে সচল হবে।

বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল ফোন নিবন্ধনের উপায়

ধাপ-১: neir.btrc.gov.bd পোর্টাল ভিজিট করে আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করুন।

ধাপ-২: পোর্টালের ‘Special Registration’ সেকশনে গিয়ে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর দিন।

ধাপ-৩: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ছবি/স্ক্যান কপি (পাসপোর্টের ভিসা/ইমিগ্রেশন, ক্রয় রশিদ ইত্যাদি) আপলোড করুন। এরপর সাবমিট বাটনে চাপ দিন।

ধাপ-৪: মোবাইলফোনটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহকসেবা বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সাহায্যেও এই সেবা নেওয়া যাবে। যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা (ব্যাগেজ রুলস নামে পরিচিত) অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশের নেটওয়ার্কে আগে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত একটি বাদে সর্বোচ্চ একটি মোবাইল ফোন বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। আর শুল্ক দিয়ে আরও একটি মোবাইল ফোন আনতে পারবেন।

নিবন্ধিত হ্যান্ডসেট ডি-রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়া

১৬ ডিসেম্বর থেকে গ্রাহকের ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট বিক্রি বা হস্তান্তরের প্রয়োজন হলে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করে তা করা যাবে। ডি-রেজিস্ট্রেশন করার সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) শেষের চার ডিজিট দিতে হবে। গ্রাহকের ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট নিচের মাধ্যমগুলোর সাহায্যে ডি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে—

(ক) সিটিজেন পোর্টাল (neir.btrc.gov.bd)

(খ) এমএনও পোর্টাল

(গ) মোবাইল অ্যাপস

(ঘ) ইউএসএসডি চ্যানেল (*১৬১৬১#)

ডি-রেজিস্ট্রেশনের শর্ত

(ক) ডি-রেজিস্ট্রেশনের জন্য গ্রাহকের হ্যান্ডসেটে ব্যবহৃত সিম অবশ্যই নিজ এনআইডিতে নিবন্ধিত হতে হবে।

(খ) ক্লোন বা ডুপ্লিকেট আইএমইআই–সংবলিত হ্যান্ডসেটটি ডি-রেজিস্ট্রেশন করার সময় অতিরিক্ত তথ্য হিসেবে পরবর্তী ব্যবহারকারীর সিম নম্বর দিতে হবে।

করপোরেট সিম ব্যবহারকারী গ্রাহকের ক্ষেত্রে ডি-রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া

করপোরেট সিম ব্যবহারকারীদের ৩০ দিনের মধ্যে ইউএসএসডি চ্যানেল বা সিটিজেন পোর্টালের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এনআইডির তথ্য দেওয়ার জন্য এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করা হবে।

বর্ণিত তথ্য জমা সাপেক্ষে ব্যক্তিগত এনআইডি বা কি-কন্টাক্ট-পয়েন্টের (কেসিপি) এনআইডি দিয়ে ডি-রেজিস্ট্রেশন সুবিধা নেওয়া যাবে। অন্যথায় শুধু কি-কন্টাক্ট-পয়েন্টের এনআইডির তথ্য দিয়ে ডি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

চুরি বা হারালে ব্লক করার প্রক্রিয়া

গ্রাহকের ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে সিটিজেন পোর্টাল (neir.btrc.gov.bd)/মোবাইল অ্যাপস বা মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসেবাকেন্দ্র থেকে যেকোনো সময়ে লক বা আনলক করা যাবে।

যেসব গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাদের এনইআইআর সেবা নেওয়ার প্রক্রিয়া

মোবাইল ফোন গ্রাহক ইউএসএসডি চ্যানেল বা এনইআইআরের (neir.btrc.gov.bd) সিটিজেন পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপস বা মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এনইআইআর সিস্টেমের সেবা নিতে পারবেন। তবে যেসব গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তারা ইউএসএসডি চ্যানেল বা ১২১ ডায়াল করে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে এনইআইআর সেবা নিতে পারবেন।

সূত্র: বাসস

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন