

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ভারতের উত্তরপ্রদেশের ঐতিহাসিক শহর লখনৌয়ের হুসেইনাবাদে এখনও জীবন্ত এক ঔপনিবেশিক যুগের চিহ্ন বহন করছে-ব্রিটিশদের দেওয়া ঋণের বিপরীতে নবাব পরিবারের উত্তরাধিকারীদের ‘ওয়াসিকা’ নামে পরিচিত মাসিক পেনশন প্রদান প্রথা।
১৮০০-এর দশকের গোড়ার দিকে অওধের নবাব সুজা-উদ-দৌলার স্ত্রী বহুবেগম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে মোট ৪০ মিলিয়ন রুপি ঋণ দিয়েছিলেন। এই বিপুল অর্থের বিনিময়ে কোম্পানি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে নবাব পরিবারের উত্তরাধিকারীদের প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট ভাতা প্রদানের অঙ্গীকার করা হয়। ফার্সি ভাষায় এই চুক্তিপত্রকে বলা হয় ‘ওয়াসিকা’-অর্থাৎ লিখিত প্রতিশ্রুতি।
দুই শত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ঐতিহ্য এখনও বহাল। বর্তমানে প্রায় বারো শতাধিক নবাব পরিবারের সদস্য এই ওয়াসিকা পেনশন পান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণ এতটাই নগণ্য হয়ে পড়েছে যে, কারও মাসিক পেনশন এখন মাত্র ৯ টাকা ৭০ পয়সা। কেউ কেউ পুরো বছরের টাকা একসঙ্গে তুলতে ব্যাংকে যান, কারণ মাসিক ভাতায় তেমন কোনো বাস্তব সুবিধা মেলে না।
লখনৌয়ের প্রবীণ নাগরিক ফৈয়াজ আলী খান বলেন, এটা এখন মূলত ইতিহাসের স্মারক, টাকার মূল্য নেই বললেই চলে। তবুও এই প্রথা টিকে আছে, কারণ এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্মান ও প্রতিশ্রুতির অংশ।
ওয়াসিকার জন্য প্রতিষ্ঠিত মূলধন হিসেবেই ব্যাংকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা জমা আছে। সেই টাকার সুদ দিয়েই এখনো নিয়মিতভাবে এই পেনশন প্রদান করা হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্মে উত্তরাধিকারীরা ভাগ হতে থাকায় প্রতিজনের অংশ ক্রমেই ক্ষুদ্র হয়ে গেছে।
তবে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, এটি সামন্ততান্ত্রিক যুগের একটি নিদর্শন, যা এখন অর্থহীন। অন্যদিকে নবাব বংশের অনেক উত্তরসূরি এটিকে তাদের ঐতিহ্য ও আইনি অধিকার হিসেবে দেখেন।
সম্প্রতি পরিবারের এক সদস্য শহীদ আলী খান পেনশন পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। তার দাবি, ওয়াসিকার পরিমাণ রুপিতে নয়, বরং ঐ সময়ের রূপার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা উচিত।
দুই শতাব্দী আগে করা একটি আর্থিক চুক্তি আজও টিকে আছে, যা শুধু লখনৌ নয়, ভারতের ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরও এক বিরল ও বেদনামিশ্রিত স্মারক হিসেবে বিবেচিত।
মন্তব্য করুন
