

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ভারতের উত্তর প্রদেশের জৌনপুর জেলার মুয়ারকি গ্রামে স্থানীয় প্রশাসন গ্রাম প্রধান সাদিক আহমেদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি সরকারি জলসম্পদ বিভাগের জমি অবৈধভাবে দখল করেছিলেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (এসডিএম) শৈলেন্দ্র কুমারের তত্ত্বাবধানে এবং তেহসিলদার আদালতের নির্দেশে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। কর্মকর্তারা জানান, প্রায় আট বিঘা সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, যা বহুদিন ধরে অবৈধভাবে দখল ছিল।
তবে গ্রামবাসীরা প্রশাসনের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের দাবি, এটি সরাসরি বৈষম্যের উদাহরণ। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জিমিল বলেন, পুরো এলাকায় অসংখ্য অবৈধ দখল রয়েছে, কিন্তু কেবল মুসলিম গ্রাম প্রধানের বাড়িটিই টার্গেট করা হয়েছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ভাঙার ওপর স্থগিতাদেশও উপেক্ষা করা হয়েছে।
আরেক বাসিন্দা ফাতিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বুলডোজার নিয়ে হঠাৎ এসে সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের জিনিসপত্র সরানোর সুযোগও দেওয়া হয়নি। কয়েক মিনিটেই সব শেষ।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই অভিযান সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে, যেখানে যথাযথ নোটিশ ছাড়া কোনো বাড়ি ভাঙা নিষিদ্ধ। স্থানীয় আইনজীবী তারিক হাসান বলেন, প্রশাসনের উচিত ছিল আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেওয়া ও আপিলের সুযোগ রাখা। এখানে তা করা হয়নি।
সামাজিক কর্মী আসাদ রিজভি ঘটনাটিকে “শাস্তির রাজনীতি” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, উত্তর প্রদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ বুলডোজার অভিযানই মুসলিম সম্প্রদায়ের বাড়ি লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে।
ভীত ও অসহায় গ্রামবাসীরা বলছেন, এখন প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন তারা। দোকানদার ইমরান খান বলেন, যাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা, তারাই এখন গরিবদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছেন।
তবে এসডিএম শৈলেন্দ্র কুমার দাবি করেছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি আইনি নির্দেশনা অনুসারেই সম্পন্ন হয়েছে। জমিটি জলসম্পদ বিভাগের মালিকানাধীন সরকারি সম্পত্তি ছিল। আমরা কোর্টের রায় অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি।
এদিকে ভাঙার পর গ্রামজুড়ে এখন ধ্বংসাবশেষে ছাওয়া এক নিস্তব্ধ পরিবেশ। সাদিক আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি সত্যিই আমি অপরাধী হতাম, তাহলে আদালতে আমার বক্তব্য রাখার সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল। আমাদের কথা কেউ শুনতেই চায়নি।
এক প্রবীণ বাসিন্দা চোখ ভেজা কণ্ঠে বলেন, আমরা শুধু আইনের সামনে সমান আচরণ চাই। এই দেশে কি সেটাও এখন দাবি করা কঠিন?
সূত্র: অবজারভার পোস্ট
মন্তব্য করুন
