

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় বড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপের শান্তিপ্রিয় দেশ সুইডেন।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য বৈশ্বিক সংঘাতের ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে তারা দেশব্যাপী খাদ্য মজুত কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
সুইডেনের কৃষি বিষয়ক সরকারি সংস্থা বোর্ড অব এগ্রিকালচার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘর্ষ— এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা এখন এমন এক সময় পার করছি, যেখানে পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য উপাদান সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সুইডিশ সরকার প্রায় ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হলো, ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে দেশজুড়ে একাধিক আধুনিক খাদ্য গুদাম স্থাপন করা। গুদামগুলোতে শস্য, শুকনো খাবার এবং দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণযোগ্য খাদ্যদ্রব্য মজুত থাকবে।
সরকারি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিটি নাগরিক যেন প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ হাজার ক্যালরি পরিমাণ খাবার পেতে পারেন— তা নিশ্চিত করতেই এই খাদ্য মজুত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
সুইডেনের পাশের দেশ ফিনল্যান্ডও সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় নিজেদের জনগণকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ আগামী মাস থেকেই নাগরিকদের জন্য যুদ্ধ ও জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে।
এই প্রশিক্ষণে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাদ্য ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, সংকট মোকাবেলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অন্যদিকে এই উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন থেকে কটাক্ষমূলক মন্তব্য এসেছে। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি (RT)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো অকারণে রাশিয়াকে ভয় পায় এবং একের পর এক রুশবিরোধী হিস্টিরিয়ায় ভুগছে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের এমন প্রস্তুতিও সেই হিস্টিরিয়ারই অংশ। রাশিয়ার কারণে কেন বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে— সে প্রশ্ন তাদের করাই উচিত।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এবং রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা বাড়তে থাকায় ইউরোপের দেশগুলো আরও বেশি করে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে যারা ন্যাটোর সদস্য বা সদস্যপদ প্রক্রিয়ায় আছে, তাদের মধ্যে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এরই অংশ হিসেবে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো দেখা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম শান্তিপ্রিয় ও উন্নত দেশ সুইডেন এমন এক সময়ে খাদ্য মজুতের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাতের শঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে।
এই উদ্যোগ শুধু সম্ভাব্য যুদ্ধ নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের সময়েও দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
