

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী অধ্যায়ের প্রতিনিধি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তোমিইচি মুরাইয়ামা আর নেই।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০১ বছর।
মুরাইয়ামা ছিলেন জাপানের ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী। ১৯২৪ সালে কিউশু দ্বীপের ওইতা জেলায় জন্ম নেওয়া এই নেতা, ছাত্রাবস্থায়ই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বামধারার রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন এবং পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেন।
রাজনীতির মঞ্চে তার যাত্রা শুরু হয় স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে। এরপর ১৯৭২ সালে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি—সেই বছরেই তিনি জাপানের নিম্নকক্ষের সদস্য নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেই আসন ধরে রাখতে সক্ষম হন।
১৯৯৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা উদার গণতন্ত্রী দল (এলডিপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
সেই সুযোগে বিরোধী আটটি দল মিলে নতুন জোট সরকার গঠন করে। ওই সরকারে সবচেয়ে বেশি আসন ছিল সমাজতন্ত্রী দলের, এরপর কোমেই পার্টি।
সরকার গঠনের দায়িত্ব প্রথমে পান ছোট দলের নেতা মোরিহিরো হোসোকাওয়া। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই জোটে ভাঙনের আভাস দেখা দিলে এলডিপি পর্দার আড়ালে সমাজতন্ত্রীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসে।
১৯৯৪ সালের জুন মাসে এলডিপি ও সমাজতন্ত্রী দল যৌথভাবে সরকার গঠন করে এবং মুরাইয়ামা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। জাপানের ৮১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত।
তার মন্ত্রিসভা বড় কোনো অর্থনৈতিক সাফল্য না দেখালেও, তিনি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপানের সামরিক আগ্রাসনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
চীনসহ অন্যান্য এশীয় দেশগুলোতে জাপানি সেনাবাহিনীর কার্যকলাপের জন্য এই আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ ছিল জাপান সরকারের পক্ষ থেকে বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এছাড়াও, হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা ও পুনর্বাসন আইন প্রণয়ন ছিল তার সরকারের আরেকটি মানবিক উদ্যোগ।
ওই আইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেতে শুরু করে, এবং সেই কারণেই আজও তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অনেকে।
মুরাইয়ামার মৃত্যুতে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, মুরাইয়ামা সেসময়ের অনেক জটিল ও সংকটপূর্ণ মুহূর্তে সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তার শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার মনোভাব তাকে জাপানের শান্তিপ্রিয় জনগণের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা এনে দিয়েছে।
মন্তব্য করুন

