শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দেড় মাসে সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ঘরে-বাইরে দুর্নীতি দমনে দুদকের লড়াই

মাজহার ইমন, স্টাফ রিপোর্টার, এনপিবি
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
expand
ঘরে-বাইরে দুর্নীতি দমনে দুদকের লড়াই

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবার ঘরে-বাইরে সমান তৎপর। একদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিগত সরকার, কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান, মামলার তদন্ত; অন্যদিকে নিজেদের ভেতরের অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে সংস্থাটি।

দেড় মাসের ব্যবধানে সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, ঘুষ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ব্যবস্থা নিয়েছে দুদক। সর্বশেষ বাগেরহাটে কর্মরত উপ-সহকারী পরিচালক আবুল হাশেম ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ দাবি করলে তাকে ওএসডি করে ঢাকায় সংযুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনের জন্য গঠিত প্রতিষ্ঠান দুদক নিয়ে সবসময়ই নানা বিতর্ক ছিল। সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান একসময় একে “দন্তহীন বাঘ” আখ্যা দিয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলে অভিযোগ আছে। বিরোধী দল ও ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই ছিল মূল কাজ; এমন অভিযোগ ছিল সাধারণ মানুষের মাঝেও বহুল আলোচিত।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ঘটে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তরুণদের নেতৃত্বে এই গণআন্দোলনে প্রাণ হারান হাজারো মানুষ। এরপর দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেই দুদকসহ নানা প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুদকের কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন এসেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আমলাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা তদন্ত করছে কমিশন।

দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৬টি মামলার কয়েকটির রায় নভেম্বরের মধ্যেই হতে পারে। এছাড়া শুধুমাত্র অতীত নয়, বর্তমান সরকারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক। একইসঙ্গে জেলা-উপজেলায় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে যে, দুদক এবার সত্যিকারের স্বাধীনভাবে কাজ করছে।

যখন বাইরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদক অভিযান চালাচ্ছে, তখন নিজেদের ভেতরকার অসৎ কর্মকর্তারাও ধরা পড়তে শুরু করেছেন। ঘুষ দাবি, মামলায় অব্যাহতি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া, অবৈধ সম্পদ অর্জন-এসব অভিযোগে দেড় মাসে সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আবুল হাশেমের ঘটনা সবচেয়ে আলোচিত। ব্যবসায়ীকে তদন্ত থেকে রেহাই দেওয়ার নামে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি। পরে প্রমাণ মেলায় তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চমবারের মতো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পাঁচ বছরের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এদিন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক সংস্কার কমিশনের দেওয়া ৪৭টি সুপারিশ প্রায় সব রাজনৈতিক দলই মেনে নিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এগুলো বাস্তবায়িত হলে দুদক সত্যিকার অর্থে একটি আদর্শ দুর্নীতি দমন কমিশনে পরিণত হবে।

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রসঙ্গে কমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন— “দুদক যদি দুর্নীতিমুক্ত না হয়, তবে অন্য প্রতিষ্ঠানকে বলার নৈতিক অধিকার থাকে না। তাই আমরা নিজেদের ঘরে দুর্নীতি রোধে কাজ করছি এবং এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন