

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে—এমন প্রাথমিক ধারণা করছে পুলিশ। ব্যক্তিগত কোনো বিরোধের বিষয় এখানে স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ এবং দেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিবি প্রধান বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ঘটানো হয়ে থাকতে পারে।
এখানে ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে হয়নি। ঘটনার শুরু থেকে আমরা মাঠে ছিলাম। সব এজেন্সি সমন্বিতভাবে কাজ করেছি। এটাকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সম্ভাব্য সব দিকগুলো দেখছি।
’ ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমরা ফয়সাল ও আলমগীরকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। অপরাধীরা নিজের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয় না। তারা সবাইকে বিভ্রান্ত করে থাকে। ফয়সালের বাবা মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করেছিল।
পরে যাচাই করে আসল নম্বরপ্লেটের সন্ধান পেয়েছি। বিআরটিএতে খোঁজ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমরা এসব তদন্ত করে যাচ্ছি।’ খুনিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে, গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিককে ৫৪ ধারায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাদের নাম আসছে তাদের সবাইকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে জানিয়ে ডিবিপ্রধান আরো বলেন, ‘উদ্ধার করা চেকগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির নামে। কোনো অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। যাদের চেক তারা তারিখ ছাড়া সাইন করে রেখেছিল। আমরা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারী ফয়সাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। বলেন, ‘ফয়সালের শেষ অবস্থান নিয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটা পেতে আমাদের বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তবে সে যে দেশের বাইরে চলে গেছে, এমন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাইনি। অনেক সময় অপরাধীদের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।’
র্যাবের মুখপাত্র (আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক) উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ‘হাদির হত্যাকারী ফয়সাল ঘটনার দিন নরসিংদী গ্রিনজোন রিসোর্ট থেকে আগারগাঁও বোনের বাসায় আসে। ফয়সালের শ্যালক শিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাদিকে হত্যাচেষ্টার পর পিস্তলের ব্যাগ বাবাকে দেয়, বাবা শিপুকে দেয়, শিপু তার বন্ধু মোহাম্মদ ফয়সালকে দেয়। ফয়সাল ভয়ে ব্যাগটি বিলে ফেলে দেয়।’
বিজিবি ময়মনসিংহ রিজিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যখন আমরা খবর পাই হত্যাকারী ময়মনসিংহ এসেছে, তখন সারা রাত অপারেশন পরিচালনা করি অন্য ফোর্স সঙ্গে নিয়ে। ফিলিপের কল হিস্ট্রি ধরে আমরা অভিযানে যাই। তবে সে রাতে আমরা ফিলিপকে পাইনি। ফিলিপকে ধরার জন্য আমরা সর্ব শক্তি প্রয়োগ করেছি। সে সীমান্তে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। সীমান্তের কাছাকাছি যারা অবস্থান করে তারা অধিকাংশ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকে। ফিলিপের পাশাপাশি জেমি চিসিং এবং আরও একজন নজরদারিতে আছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশেই শরীফ ওসমান হাদিকে দাফন করা হয়। এদিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শরীফ ওসমান বিন হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়।
মন্তব্য করুন

