

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


সালমোনেলা টাইফি নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেই টাইফয়েড জ্বরের উৎপত্তি। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ানো এই রোগটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশেও বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে টাইফয়েডের সংক্রমণ, জটিলতা এবং মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগটি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা গ্রহণ, পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ খাবার ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা।
টাইফয়েড টিকা মূলত শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে সুরক্ষা দেয়। বর্তমানে দেশে শিশুদের জন্য দেওয়া হচ্ছে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (TCV), যা মাংসপেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।
ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট উপাদান ও ক্যারিয়ার প্রোটিন যুক্ত করে তৈরি এই আধুনিক সাব-ইউনিট টিকাটি শিশুদের শরীরে আগের প্রজন্মের টিকার তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালের ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন।
এই কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশু-কিশোরকে বিনা মূল্যে এক ডোজ TCV টিকা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত ও সুপারিশকৃত এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর-এটি কোনো ট্রায়াল ভ্যাকসিন নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত।
এই টিকা মূলত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য নির্ধারিত। তবে ১৫ বছরের বেশি বয়সীরাও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে টিকা নিতে পারেন। তবে যেসব ক্ষেত্রে টিকা দেওয়া যাবে না
বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শিশু ইতিমধ্যে এই টিকা নিয়েছে, এবং গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
টিকা নেওয়ার পর সাধারণত সামান্য ব্যথা, লালচে ভাব, হালকা জ্বর বা ইনজেকশন স্থানে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে, যা স্বাভাবিক এবং অল্প সময়েই সেরে যায়।
এটি শিশুর ভবিষ্যৎ বিকাশ বা প্রজনন সক্ষমতায় কোনো প্রভাব ফেলে না বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ খাদ্য এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করলেই এ রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশে শুরু হওয়া এই জাতীয় টিকাদান কার্যক্রম দেশের শিশুস্বাস্থ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সময়মতো টিকা গ্রহণ করলে টাইফয়েডের ঝুঁকি কমে যাবে উল্লেখযোগ্যভাবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেবে আরও সুস্থ ও নিরাপদ জীবন।
মন্তব্য করুন
