

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রক্তের একটি বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে ৫০টিরও বেশি ধরনের ক্যান্সার আগেভাগে শনাক্ত করা যেতে পারে—সম্প্রতি উত্তর আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় এমন ইঙ্গিত মিলেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, পরীক্ষায় এমন অনেক ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, যেগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয়ের প্রচলিত কোনো ব্যবস্থা বর্তমানে নেই।
সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক হলো—অর্ধেকেরও বেশি ক্ষেত্রে ক্যান্সার ধরা পড়েছে এমন পর্যায়ে, যখন চিকিৎসা কার্যকর এবং নিরাময়ের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি।
‘গ্যালারি টেস্ট’ নামে পরিচিত এই রক্ত পরীক্ষাটি তৈরি করেছে মার্কিন বায়োটেক প্রতিষ্ঠান গ্রেইল। এটি রক্তে উপস্থিত ডিএনএ’র ক্ষুদ্র অংশ শনাক্ত করতে পারে, যা টিউমার কোষ থেকে ভেঙে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) পরীক্ষামূলকভাবে এই পরীক্ষা চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ২৫ হাজার মানুষের ওপর এক বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে—প্রতি ১০০ জনে একজনের পরীক্ষায় পজিটিভ ফল আসে এবং এদের মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশের ক্ষেত্রেই পরবর্তীতে ক্যান্সার নিশ্চিত হয়।
ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. নিমা নবাবিজাদেহ বলেন, এই প্রযুক্তি ক্যান্সার শনাক্তকরণের ধারা বদলে দিতে পারে।
তাঁর মতে, ক্যান্সার যখন সবচেয়ে চিকিৎসাযোগ্য পর্যায়ে থাকে, তখনই এটি শনাক্ত করা গেলে মৃত্যুহার অনেক কমানো সম্ভব।
পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল পাওয়া ব্যক্তিদের ৯৯ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে ফলাফল সঠিক ছিল বলে গবেষকরা জানান।
অর্থাৎ পরীক্ষাটি মিথ্যা পজিটিভ ফল দেখানোর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে খুব কম।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্তন, ফুসফুস, অন্ত্র ও জরায়ুমুখের মতো সাধারণ ক্যান্সার শনাক্তে এই পরীক্ষা সাতগুণ বেশি কার্যকর।
একই সঙ্গে এটি ডিম্বাশয়, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, লিভার ও মূত্রথলির মতো ক্যান্সারও শনাক্ত করতে সক্ষম, যেগুলোর জন্য বর্তমানে কোনো স্ক্রিনিং পদ্ধতি চালু নেই।
প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই পরীক্ষাটি ক্যান্সারের উৎস নির্ধারণে সফল হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফলাফল ভবিষ্যতে ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—এই পদ্ধতি আসলেই ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার কমাতে পারে কি না, তা জানতে আরও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের অধ্যাপক ক্লেয়ার টার্নবুল বলেন, “প্রাথমিক শনাক্তকরণ কার্যকর হলেও এটি মৃত্যু কমাচ্ছে কি না—তা নিশ্চিত করতে আরও প্রমাণ দরকার।”
এই গবেষণার ফলাফল বার্লিনে ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর মেডিকেল অনকোলজি কংগ্রেসে প্রকাশিত হবে।
আগামী বছর এনএইচএস পরিচালিত আরও বড় আকারের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।
গ্রেইলের বায়োফার্মা বিভাগের প্রেসিডেন্ট স্যার হারপাল কুমার বলেন, “অনেক ক্যান্সার তখনই ধরা পড়ে যখন তা ইতিমধ্যেই অগ্রসর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে রোগটি এমন সময় শনাক্ত করা, যখন চিকিৎসা কার্যকর এবং সম্ভাব্যভাবে নিরাময়যোগ্য।”
অন্যদিকে, ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে–এর বিজ্ঞানী নাসের তুরাবি মনে করেন, পরীক্ষাটি ব্যবহারের আগে বাড়তি ফলাফল বা ভুল শনাক্তকরণের সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “এই ধরনের নতুন পরীক্ষা জাতীয় স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার আগে পর্যাপ্ত মূল্যায়ন জরুরি।”
মন্তব্য করুন
