বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানুষ কেন বহু জনের প্রতি আকষর্ণ বোধ করে

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম
বহুবিবাহ প্রথায় একজন নারীর একাধিক স্বামী এবং একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে।
expand
বহুবিবাহ প্রথায় একজন নারীর একাধিক স্বামী এবং একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে।

মানুষের এক বা একাধিক ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পেছনে জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণ বিদ্যমান। জিনগতভাবে মানুষ বহুগামী হতে পারে এবং বিভিন্ন গুণাবলী, ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও সামর্থ্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা স্বাভাবিক। এছাড়া, সমাজের প্রচলিত ধারণা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও এই আকর্ষণে প্রভাব ফেলে।

আমরা এখন এমন সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন ডেটিং অ্যাপগুলোতে অপশনের শেষ নেই এবং সম্পর্কের ধরনও প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি প্রশ্ন এখন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, মানুষ কি সত্যিই একগামী?

ইংরেজিতে পলিয়্যামোরি নামক একটি শব্দ আছে, যা মূলত সম্পর্কের একটি ধরন। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি যদি একসাথে একাধিক প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন এবং সব পক্ষই বিষয়টি সম্বন্ধে জানেন ও রাজি থাকেন, তখন সেই সম্পর্ককে পলিয়্যামোরি হিসাবে সঙ্গায়িত করা হয়।

লন্ডনে বসবাসরত রোমানিয়ান নারী অ্যালাইনা যখন পলিয়্যামোরি সম্বন্ধে জানতে পারেন, তখন তিনি নিজেকে ঠিক ওই প্রশ্নই করেছিলেন যে মানুষ আসলেই একগামী কিনা।

তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি এমন একজনের সঙ্গে দেখা করেছি, যিনি সবসময়ই পলিয়্যামোরাস ছিলেন। তখনই আমার মনে প্রশ্ন আসে, সমাজ কেন একগামিতাকেই আদর্শ ধরেছে?

মানুষের বিবর্তনের গতিপথ বোঝার একটি উপায় হলো, আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রজাতি বানরজাতীয় প্রাণির বংশবৃদ্ধির পদ্ধতিগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা।

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির এভোলিউশনারি বায়োলজিস্ট বা বিবর্তনবিদ কিট ওপি জানান, গরিলারা বহুগামী। একটি পুরুষ গরিলা একাধিক নারী গরিলার সাথে মিলিত হয়।

কিন্তু বংশবৃদ্ধির এই পদ্ধতি খুব একটা কার্যকর নয়। কারণ এমন ব্যবস্থায় অনেক সময় নবজাতককে মেরে ফেলার মতো নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে, উল্লেখ করেন ড. অপি।

একটি পুরুষ গরিলা যখন দেখে যে কোনও শাবক তার নিজের না, তখন সে সেই শাবককে মেরে ফেলে, যেন শাবকের মা দ্রুত প্রজননে সক্ষম হয় এবং সে তার সঙ্গে মিলিত হতে পারে। এই প্রজনন কৌশল নিশ্চয়ই আমরা আমাদের সমাজে অনুকরণ করতে চাই, তিনি যোগ করেন।

তবে মানবজাতির কাছাকাছি আরও কিছু প্রাইমেট, যেমন‒ নারী শিম্পাঞ্জি ও বোনোবো আবার প্রজননের ক্ষেত্রে অন্য কৌশল অনুসরণ করে। তারা বহু পুরুষের সাথে মিলিত হয়, যার ফলে বাবার সঠিক পরিচয় জানা যায় না এবং শাবকদের ওপর আক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়।

মানুষের সমাজেও সম্ভবত এই ধরনের মিলন ব্যবস্থাই প্রচলিত ছিল, যেখানে নারী ও পুরুষ, উভয়ই একাধিক মানুষের সঙ্গে মিলিত হতো। তবে প্রায় ২০ লাখ বছর আগে "জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে" এখানে বড় এক পরিবর্তন আসে বলে জানান ড. অপি।

কিট ওপি বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে আমাদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করতো। সেখানে তখন ভয়াবহ খরা দেখা দেয়। যার ফলে ঘন জঙ্গল হারিয়ে গিয়ে ওই পুরো অঞ্চুল তৃণভূমিতে (সাভান্না) রূপ নেয়। ওই সময় মানুষকে শিকারি পশুদের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য বৃহৎ আকারে দলবদ্ধভাবে থাকতে হতো। এই জটিল সামাজিক কাঠামো সামলাতে মানুষের মস্তিষ্ক বড় হয়। আর সেই মস্তিষ্ক পুষ্ট রাখতে শিশুদের স্তন্যপানকাল দীর্ঘ হয়।

কিন্তু একটি বড় দলে যেহেতু অনেক পুরুষ ছিল এবং নারীরা যেহেতু একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হত, তাই পিতৃপরিচয় নির্ধারণ করাটা তখন অনেক কঠিন বিষয় হয়ে ওঠে।

"তাছাড়া, এই সময় সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য মায়েদের সহায়তা দরকার হয়, বিশেষত যেকোনও একজন পুরুষের। এবং, তখনই মানুষ একগামিতাকে বেছে নেয়।

কিট ওপি'র মতে, একগামিতাই শ্রেষ্ঠ, এই ধারণা থেকে এই পরিবর্তন হয়নি। বরং, তখনকার বাস্তবতায় টিকে থাকার একমাত্র উপায় হিসাবে এটি আবশ্যক হয়ে পড়েছিলো।

কারণ বড় মস্তিষ্ক ও ধীরে বেড়ে ওঠা মানব সন্তান পালনের জন্য বিপুল সময়, ভালোবাসা, নিরাপত্তা দরকার। একজন মায়ের পক্ষে একা সেটা সামলানো সবসময় সম্ভব নয়। এসব কারণেই তখন মায়েদের সহায়তা দরকার হয়, বিশেষত পুরুষের।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বাস্তবতার কারণে ওইসময় মানবজাতি একগামিতাকে বেছে নিলেও তারা একজন সঙ্গীর প্রতি পুরোপুরি অনুগত থাকতে প্রায়ই হিমশিম খেত।

ড. ওপি বলেন, জীবনভর শুধু একজনের সাথেই থাকে ও সঙ্গীর সাথে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না, পৃথিবীতে এমন প্রজাতিও আছে। তবে তা বেশ বিরল।

তার মতে, আমাদের সবচেয়ে কাছের একগামী প্রজাতি হলো গিবন। গিবন দম্পতিরা জঙ্গলের কোনও নির্দিষ্ট কোণে আলাদা আলাদাভাবে থাকে। তাদের সীমানায় কে ঢুকবে আর কে ঢুকবে না, তা নিয়ন্ত্রণ করাটা নারী ও পুরুষ গিবন, উভয়ের জন্যই সম্ভবত সহজ।

সোর্সঃ বিবিসি বাংলা

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন