শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘের ফেলোশিপে বাংলাদেশের মারজানা আক্তার

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
জাতিসংঘের ফেলোশিপে বাংলাদেশের মারজানা আক্তার
expand
জাতিসংঘের ফেলোশিপে বাংলাদেশের মারজানা আক্তার

বাংলাদেশের তরুণ গবেষক মারজানা আক্তার অর্জন করেছেন এক ঐতিহাসিক স্বীকৃতি। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন জাতিসংঘের ‘ইয়াং উইমেন ফর বায়োসিকিউরিটি ফেলোশিপ-২০২৫’ প্রোগ্রামে-বাংলাদেশ থেকে প্রথম নারী গবেষক হিসেবে।

বিশ্বব্যাপী ১৯৩টি দেশের মধ্য থেকে মাত্র ১০ জন তরুণী গবেষক এ বছরের ফেলোশিপে স্থান পেয়েছেন, তাদের মধ্যেই রয়েছেন মারজানা।

জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক দপ্তর জীববৈজ্ঞানিক অস্ত্রবিরোধী চুক্তির (Biological Weapons Convention) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই ফেলোশিপের আয়োজন করছে। এর মূল লক্ষ্য-জীববিজ্ঞানের জ্ঞান ও গবেষণাকে মানবকল্যাণে ব্যবহার এবং বায়োসিকিউরিটি বিষয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি।

মারজানা আক্তার নিজেই সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে তার নির্বাচিত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। এর আগে ১ অক্টোবর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইমেইলে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নির্বাচনের বিষয়টি জানানো হয়।

এই ফেলোশিপের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বর মাসে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। সেখানে বিশ্বের শীর্ষ গবেষক, বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন মারজানা-যা দেশের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

মারজানা সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট) থেকে বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

তার গবেষণার বিষয় ছিল বাংলাদেশের পোলট্রিতে চিকেন ইনফেকশাস অ্যানিমিয়া ভাইরাস (CIAV), যেখানে তিনি দেশের প্রথম জেনোটাইপ ৩বি স্ট্রেইন শনাক্ত করেন। তার গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন, যিনি পুরো যাত্রায় তাকে একাডেমিক ও মানবিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।

গবেষণার সময়ই মারজানা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। ক্লাস, ল্যাব, থিসিস—সবকিছু একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে তাকে পাড়ি দিতে হয় কঠিন সময়। গর্ভাবস্থার ছয় মাসে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তিনি আইসিইউতে ভর্তি হন এবং পাঁচ দিন সেখানে কাটান। এ সময় তার স্বামী ইউশা আরাফ নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যান। শারীরিক ও মানসিক কষ্টের মধ্যেও মারজানা গবেষণার কাজ থামাননি।

সেই সময়েই তার ল্যাব নির্বাচিত হয় জাপান সরকারের অর্থায়নে সাকুরা সায়েন্স এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম-এর জন্য। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি সেই সফরে অংশ নিতে পারেননি। তবুও কিছুদিন পর কন্যা আনাইজার জন্মের পর তিনি নিজের থিসিস সম্পন্ন করেন এবং সফলভাবে গবেষণা শেষ করেন।

নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে মারজানা বলেন, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোই আমাকে শক্তি দিয়েছে। আমি জানতাম, হাল না ছাড়লে একদিন এই কষ্টই আমার সাফল্যের পথ তৈরি করবে। আমার মেয়েই আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।

অল্প বয়সেই মারজানার ৯টি আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার গবেষণার মূল ক্ষেত্র ভাইরোলজি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এবং সংক্রামক রোগ।

তার স্বামী ইউশা আরাফ বলেন, “এ সাফল্য শুধু মারজানার নয়-এটি বাংলাদেশের তরুণ গবেষকদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করেছে, সাহস, বিশ্বাস আর পরিশ্রম থাকলে অসম্ভব কিছুই নয়।

নিজের অর্জন সম্পর্কে মারজানা বলেন, জাতিসংঘের ফেলোশিপ পাওয়া আমার জীবনের অন্যতম বড় স্বীকৃতি। আমি চাই, দেশের মেয়েরা বুঝুক-বাধা, অসুস্থতা বা সামাজিক চ্যালেঞ্জ কখনো স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না। আমি বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানবকল্যাণে কাজ করতে চাই।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন