

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড (বিবিএমএল)-কে ২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থায়ন করছে জার্মান বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সংস্থা ডিইজি।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাড্ডায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে বিবিএমএল ও ডিইজি’র চতুর্থ অর্থায়ন চুক্তি সই হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী ও ডিইজি’র এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (শিল্প ও সেবা) পারভেজ আখতার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। বিবিএমএল ২০০৮ সালে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে নিজস্ব শিল্পপার্কে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি পিভিসি ডোর, ফিটিংস, ইলেকট্রিক্যাল সুইচ ও সকেট, ফ্যান, এনার্জি সেভিং বাল্ব, মেলামাইন, স্টেশনারি, ওপাল ও রিসাইকেল পণ্যসহ নানান জনপ্রিয় পণ্য উৎপাদন করে আসছে।
ডিইজি হলো জার্মান উন্নয়নমূলক অর্থায়ন সংস্থা এবং কেএফডব্লিউ গ্রুপের একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি উন্নয়নশীল ও উদীয়মান দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করে বেসরকারি খাতের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ১৯৬২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, ইকুইটি এবং পরামর্শসেবা প্রদান করে আসছে।
২০১৩ সাল থেকে ডিইজি বিবিএমএলের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এবং চতুর্থ ঋণচুক্তির মাধ্যমে এ সহযোগিতা নতুন এক মাইলফলকে পৌঁছেছে। নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে বিবিএমএল পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য এবং সফট পিভিসি পণ্য-যেমন পিইউ লেদার, ফ্লোর ম্যাট, সিলিং ম্যাটেরিয়াল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানির জন্য হাউজহোল্ড ক্লিনিং ব্রাশের মতো নতুন পণ্য উৎপাদনেও বিনিয়োগ করা হবে।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ডিইজি মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে। ডিইজি’র এই অর্থায়ন আংশিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইএফএসডি+ (ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরোপীয় ফান্ড ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট প্লাস) দ্বারা গ্যারান্টি যুক্ত থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইএফএসডি+ গ্যারান্টি প্রোগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ব্যবস্থা, যার আওতায় সর্বোচ্চ ৪০ বিলিয়ন ইউরো গ্যারান্টির মাধ্যমে অংশীদার দেশগুলোতে ১৩৫ বিলিয়ন ইউরোর টেকসই বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে বিবিএমএলে প্রায় ৯,৫০০ কর্মী কাজ করছেন এবং নতুন এই বিনিয়োগের ফলে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অতিরিক্ত আরও ১,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ডিইজি’র নতুন এই অর্থায়ন প্রসঙ্গে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, “আমাদের জন্য এটি অনুপ্রেরণা যে ডিইজি সবসময় আমাদের অংশীদার ও পরামর্শদাতা হিসেবে পাশে রয়েছে। এই অর্থায়ন আমাদের ভিশনকে আরও শক্তিশালী করেছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কাঁচামাল ব্যবহার করে আমরা দেশে আমদানি-পরিবর্তিত পণ্য উৎপাদন করতে প্রস্তুত, যা গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।”
ডিইজি’র চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ও ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের সদস্য মনিকা বেক বলেন, “ডিইজি উন্নয়নশীল দেশ ও উদীয়মান বাজারগুলোর বেসরকারি খাতে টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বহু বছর ধরে আমরা আমাদের অর্থায়ন সুবিধা ও বিজনেস সাপোর্ট সার্ভিসেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেডের টেকসই প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করে আসছি। এই চুক্তি আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বকে আরও দৃঢ় করবে এবং ধারাবাহিক সহযোগিতার প্রতি আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করবে।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিনিস্টার কাউন্সিলর ও হেড অব কো-অপারেশন মিশাল ক্রেজা বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ এই প্রথম বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের কোনো ঋণের জন্য ইইউ গ্যারান্টি দেওয়া হলো। এটি আমাদের গ্লোবাল গেটওয়ে উদ্যোগের আওতায় প্রাণ-আরএফএলের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে উদ্ভাবন জোরদার করা ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে।”
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জার্মান দূতাবাসের দেশটির উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান উলরিখ ক্লেপমান, আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সার্কুলার ইকোনমি, প্রাইভেট সেক্টর ও পরিবেশ বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লম, ডিইজি’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ (বাংলাদেশ ও নেপাল) ফাহমিদা আহমেদ এবং ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার ফাইয়াজ হোসেন, অ্যানালিস্ট শামস আরেফিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন

