শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উল্লাপাড়ায় বিএনপির ৭ জামায়াতসহ অন্যান্য দলের একক প্রার্থী

রায়হান আলী, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
ফাইল ছবি
expand
ফাইল ছবি

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে প্রতিদিনই। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এই আসনে এখন তৈরি হয়েছে এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ।

রাজনৈতিক পালাবদলের পর বর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ।

এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ, মতবিনিময় ও ছোট ছোট সভা-সমাবেশ করছেন। হাট-বাজার, গ্রাম থেকে শহর- সবখানেই এখন নির্বাচনের আলোচনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন পর উল্লাপাড়ায় এবার একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

অতীতের নির্বাচনী চিত্র

স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের দবির উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। এরপর ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ মির্জা, ২০০৮ ও ২০২৪ সালে শফিকুল ইসলাম শফি এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তানভীর ইমাম পরপর জয় পান।

অন্যদিকে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ তালুকদার, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপির এম. আকবর আলী এবং ১৯৯৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামছুল আলম জয়ী হয়েছিলেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ

২০০৮ সালের সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো. শফিকুল ইসলাম ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০৩ ভোট (৫৭%) পেয়ে জয়ী হন। জামায়াতের মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান পান ৯৭ হাজার ৪৬৩ ভোট (৩৪.২%) এবং বিএনপির এম. আকবর আলী পান ২৪ হাজার ৪৬০ ভোট (৮.৬%)।

জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী এককভাবে প্রার্থী দিয়েছে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে। তাঁর নেতৃত্বে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চলছে। উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নে ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার নির্বাচনী বার্তা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের কর্মীরা ঘরে ঘরে যোগাযোগ করছে এবং ভোটারদের মধ্যে ‘বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ ভোটারদের একটি অংশ জামায়াতের প্রচারে সাড়া দিচ্ছে বলে স্থানীয়দের দাবি।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘উল্লাপাড়ায় জামায়াতের সংগঠন শক্তিশালী। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার আমরা চমক দেখাবো ইন শা আল্লাহ।’

বিএনপির সাত প্রার্থী

বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সরব প্রতিযোগিতা চলছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতজন নেতা প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তাঁরা হলেন - বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম. আকবর আলী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কেএম শরফুদ্দিন মঞ্জু, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহাব, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজাদ হোসেন, সাবেক ডিআইজি ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব খান সাঈদ হাসান এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদ রনি। তাদের কর্মতৎপরতায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।

তাদের কর্মতৎপরতায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে নতুন উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সভা-সমাবেশ, দোয়া মাহফিল, মানববন্ধন ও স্থানীয় সামাজিক অনুষ্ঠানেও নেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন এম. আকবর আলী, আজাদ হোসেন ও খান সাঈদ হাসান। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে মাঠে দলকে চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখছেন তাঁরা।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বক্তব্য

এম. আকবর আলী বলেন, 'বিএনপি সরকারের আমলে উল্লাপাড়ার শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছি। শিক্ষানগরী হিসেবে উল্লাপাড়ার সুনাম ফিরিয়ে আনাই হবে আমার অঙ্গীকার।'

আজাদ হোসেন বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন সংগঠন টিকিয়ে রেখেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে ছিলাম, ৬০টিরও বেশি মামলার আসামি হয়েছি। দল মনোনয়ন দিলে জনগণই আমাকে জয়ী করবে।

খান সাঈদ হাসান বলেন, 'তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ায় আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। উল্লাপাড়ার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।'

অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম বলেন, 'দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়েছি। মনোনয়ন পেলে নারী নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।'

আব্দুল ওয়াহাব বলেন, 'আমি নির্বাচিত হলে উল্লাপাড়াকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব।

অন্যান্য দলের অবস্থান

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী (প্রীতি) বলেন, 'দল এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। তবে আমি নিয়মিত উল্লাপাড়ার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, বিশেষ করে তরুণ ও নারী ভোটারদের সঙ্গে।'

অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তর নেতারা এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। দলটি উল্লাপাড়াকে ‘চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা’ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।

স্থানীয় বিশ্লেষকদের মত

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এবার উল্লাপাড়ায় মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ভোটব্যাংক যার দিকে যাবে, তার পক্ষেই বিজয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন