শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোণার ঐতিহ্যের বালিশ মিষ্টি এখন আন্তর্জাতিক মর্যাদায়

নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৬ এএম
নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি।
expand
নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি।

বাংলাদেশের মিষ্টির জগতে একটি অনন্য নাম বালিশ মিষ্টি। শতাধিক বছরের ঐতিহ্য বহন করা এই সুস্বাদু মিষ্টি এবার পেয়েছে দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের মর্যাদা।পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) সম্প্রতি বালিশ মিষ্টিকে দেশের ৫৮তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।নেত্রকোণা শহরের বারহাট্টা রোডে এই মিষ্টির জন্ম।

আনুমানিক ১২০ বছর আগে স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গয়ানাথ ঘোষ প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেন। ছোট বালিশের মতো লম্বাটে ও নরম আকৃতির জন্যই এর নাম হয় বালিশ মিষ্টি। সময়ের পরিক্রমায় এটি শুধু নেত্রকোণার নয়, সারা বাংলাদেশের পরিচিত ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

সাধারণ সন্দেশ বা রসগোল্লার তুলনায় ভিন্ন স্বাদ ও গঠনই বালিশ মিষ্টিকে করেছে অনন্য। এখন এটি জেলার সামাজিক অনুষ্ঠান, উৎসব কিংবা উপহারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গয়ানাথ ঘোষের তৃতীয় প্রজন্ম আজও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

২০২৩ সালে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ডিপিডিটি-তে বালিশ মিষ্টির জিআই স্বীকৃতির আবেদন করা হয়। পণ্যের ইতিহাস, উৎপাদন পদ্ধতি, উপকরণ ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। যাচাই–বাছাই শেষে অবশেষে মেলে এই কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি।

গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের বর্তমান কর্ণধার ও গয়ানাথ ঘোষের নাতি বাবুল চন্দ্র মোদক বলেন,বালিশ মিষ্টি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা ভীষণ গর্বিত। দাদার হাতে যে মিষ্টির সূচনা হয়েছিল, তা আজ দেশের গৌরবের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

তিনি জানান, ১৯৬৫ সাল থেকে তাঁর বাবা নিখিল চন্দ্র মোদক ব্যবসাটি পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি ও তাঁর দুই ভাই মিলে তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে এই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন,এর আগে বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই সনদ পেয়েছিল। এবার বালিশ মিষ্টি যুক্ত হওয়ায় নেত্রকোণাবাসীর গর্ব আরও বেড়ে গেল। আমরা এটিকে জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে তুলে ধরতে কাজ করছি।

২০২১ সালে নেত্রকোণার দুর্গাপুরের বিজয়পুরের সাদামাটি প্রথম জিআই স্বীকৃতি পায়। আর ২০২৫ সালে এসে বালিশ মিষ্টির এই অর্জন জেলার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় যুক্ত করল।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তরিত এই মিষ্টি এখন শুধু নেত্রকোণার স্বাদ নয়, বাংলাদেশের এক গর্বিত ঐতিহ্য। জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে বালিশ মিষ্টি দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচয়ে জায়গা করে নিয়েছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন