

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


নেত্রকোনার রাজু বাজার থেকে সিধলি বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এ সড়ক ব্যবহারকারী হাজারো মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রাস্তার বেহাল দশার কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যাত্রীরা নিয়মিত আহত হচ্ছেন। অটোরিকশা, সিএনজি ও অন্যান্য ছোট যানবাহনের চালকরা জানান, আয় তো কমছেই, তার চেয়েও বেশি খরচ হচ্ছে যানবাহন মেরামতে। সংসার চালানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সড়কটির বড় অংশ নেত্রকোনা পৌরসভা, মেদনী ইউনিয়ন ও কালিয়ারা–গাবরাগাতি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে গেলেও এটি কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নেরও একমাত্র ভরসা। প্রায় এক লাখ মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। পর্যটনকেন্দ্র দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা যাওয়ার ক্ষেত্রেও সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে সিধলি বাজার থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী ১২–১৩টি বাস নিয়মিত চলাচল করত। কিন্তু এখন অসংখ্য গর্তে ভরা সড়কটিতে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় মানুষ বিকল্প পথে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক মো. কায়েস আহমেদ বলেন, “আমাদের বাড়ি সিধলিতে। প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করতে হয়। কষ্টের কথা বলে বোঝানো যাবে না। ১৩ কিলোমিটারে ২২টি বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি দুই ফুট পর্যন্ত জমে থাকে। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই আমাদের এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। যেখানে আগে আধঘণ্টায় যাওয়া যেত, এখন সেখানে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।”
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা। নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে যাওয়ার সময় অনেক রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। গর্ভবতী মহিলাদের অনেক সময় বাঁশ দিয়ে খাটিয়া বানিয়ে হাসপাতালে নিতে হয়। জীবন ঝুঁকির পাশাপাশি ভাড়া দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে।
চাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। গাবরাগাতি গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, “আমরা নানা শাকসবজি ও ফসল ফলাই, কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এখন আর পাইকাররা গ্রামে আসেন না।”
সিএনজি চালক জুলহাস মিয়া জানান, যাত্রী কমেছে, যানবাহনের যন্ত্রাংশ বারবার নষ্ট হচ্ছে, দুর্ঘটনা লেগেই আছে। পিকআপ চালক আল আমিন, আব্দুল হাইসহ অনেকে একই অভিযোগ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা কালিয়ারা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, “গতকালই আমাদের অটো উল্টে পড়ে মায়ের হাত ভেঙে গেছে। আরও দুজন আহত হয়েছে। এক সপ্তাহে আমাদের এলাকায় একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরও কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। বছরের পর বছর একই অবস্থা।”
ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিধলি বাজারের ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এখন পণ্য পরিবহনে দ্বিগুণ সময় লাগছে, খরচ হচ্ছে তিনগুণ। ট্রাক ও পিকআপ এই সড়ক এড়িয়ে চলে। এতে সবার জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে।”
শিক্ষার্থীরাও মারাত্মক ভোগান্তিতে আছেন। কৈলাটি ইউনিয়নের শাহ আলম, মোস্তাফিজুর রহমান, রানা মিয়া ও রোমান মির্জা জানান, “আগে ৪০ মিনিটে নেত্রকোনা সরকারি কলেজ যাওয়া যেত, এখন দুই ঘণ্টা আগে রওনা দিতে হয় এবং ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ। বৃষ্টির দিনে কলেজে যাই না।”
পথের ধারে থাকা স্কুলগুলিও সমস্যায় পড়েছে। বারুয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নাজমুল হুদা বলেন, “এই ১৩ কিলোমিটারে আটটি প্রাথমিক ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি আমাদের দুইজন নারী শিক্ষক ইজি বাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। হাঁটতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা কাদা পানিতে ভিজে যায়। বর্ষায় অনুপস্থিতি বেড়ে যায়।”
নেত্রকোনা সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শোয়াইব ইমরান বলেন, “প্রতি বছর পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় এ অবস্থা হয়। সাময়িক সংস্কার করা হলেও বর্ষায় তা টেকে না। পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”
নেত্রকোনা এলজিইডি-এর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, “১৩.৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২ কিলোমিটার মেরামত করা হয়েছে। বাকি অংশের জন্য আরটিআইপি-৩ প্রকল্পে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে। এটি বড় প্রকল্প, সীমিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। আমরা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছি।”
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, “বিষয়টি আগামী জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হবে। দ্রুত মেরামতের জন্য এলজিইডি প্রকৌশলীদের সঙ্গে কাজ করা হবে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে প্রকল্পটি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি তদারকি করব।”
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
