

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


লালমনিরহাটের পাটগ্রামে নানান অজুহাতে সারের দাম এখন কৃষকের নাগালের বাইরে। কোথাও ন্যায্য দামে সার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কৃষকদের অতিরিক্ত টাকা গুনে সার কিনতে হচ্ছে।
ডিলার ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট একটি সিন্ডিকেট সুযোগ নিচ্ছে সারের মজুদ ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে অনিয়মের। কৃষি অধিদপ্তরের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ কৃষকদের মধ্যে।
মৌসুমের শুরুতেই ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তীব্র উদ্বেগ ও চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দরে সার কিনতে হচ্ছে। এতে কৃষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে-ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার বেশি টাকা দিলে পাওয়া যায়, না হলে বিক্রেতারা বলে ‘সার নেই’। এ অবস্থায় অনেক কৃষক পরিকল্পিত আবাদ কমানোর কথাও ভাবছেন।
কৃষকদের আশঙ্কা, সারের সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে ধান, ভুট্টা, গম এবং সবজি চাষাবাদ উৎপাদন ব্যাহত হবে।
একাধিক কৃষক জানান,৫০ কেজি টিএসপি সার সরকার নির্ধারিত মূল্য ১,৩৫০ টাকা হলেও বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ১,৯৬০–২,১০০ টাকায়,ডিএপি সার নির্ধারিত মূল্য ১,০৫০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১,৪০০ টাকায়,ইউরিয়া সার নির্ধারিত মূল্য ১,৩৫০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১,৪৫০ টাকায়,পটাশ সার নির্ধারিত মূল্য ১,০০০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১,২৫০ টাকায়।
ডিলার ও ব্যবসায়ীদের দাবি— চাহিদা অনুযায়ী সারের বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকের চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে, এজন্য সামান্য বাড়তি টাকা নেওয়া হয়।
পাটগ্রাম উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় চাষযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ১৫১ হেক্টর, এবং সরাসরি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত পরিবার প্রায় ৪১ হাজার ৫০০।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী-ইউরিয়া সারের চাহিদা: ৬,৫৫০ মে. টন; বরাদ্দ: ২,৩৬৪ মে. টন,টিএসপি সারের চাহিদা: ২,১৩০ মে. টন; বরাদ্দ: ১,১৬০ মে. টন,ডিএপি সারের চাহিদা: ৩,০৫০ মে. টন; বরাদ্দ: ১,৮৪৫ মে. টন,পটাশ সারের চাহিদা: ৪,৬৫৪ মে. টন; বরাদ্দ: ১,২২২ মে. টন,অপরদিকে বরাদ্দকৃত সার মজুদ ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় কৃষক পর্যায়ে বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জগতবেড় ইউনিয়নের পশ্চিম জগতবেড় গ্রামের কৃষক মফির উদ্দিন (৬০) বলেন,সারের বাজারে আগুন। ১৯ বস্তা টিএসপি সার কিনেছি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬ শ টাকা বেশি দিয়ে, আর ইউরিয়া কিনেছি ১ শ টাকা বেশি দরে। কিভাবে আবাদ করবো?”
জোংড়া ইউনিয়নের ইসলামনগর এলাকার কৃষক আবু সাঈদ (৩২) বলেন, “এক একর জমিতে ফুলকপি লাগাইছি। এখন টিএসপি সার প্রতি বস্তায় ৬শ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সামনে ভুট্টার আবাদে কী হবে জানি না।”
পাটগ্রামের সার ডিলার মেসার্স মৌসুমী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী হরিপদ দে বলেন, “এখন সারের খুব দরকার নেই। কিন্তু কৃষকরা ভাবছে সংকট হবে, তাই সবাই একসাথে সার কিনতে ছুটছে। তবে সরকারি বরাদ্দ কৃষকের চাহিদার তুলনায় অনেক কম।”
আরেক ডিলার মেসার্স অগ্রণী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফারুক আহম্মেদ বলেন,যে বরাদ্দ পাই, সেই অনুযায়ী উপজেলা কৃষি অফিসের উপস্থিতিতে সার বিতরণ করা হয়। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার দিতে পারি না, তবে বেশি দামও নেই না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, “উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে বাজার মনিটরিং চলছে, যাতে কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সার পায়। কেউ কৃত্রিম সংকট বা কালোবাজারি তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা রয়েছে। সারের চাহিদা ধীরে ধীরে পূরণ করছি। কৃষকদের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
