শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাড়াইলে মাদক নির্মূলে ওসি সাব্বির রহমানের স্ট্যাটাস

তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম
তাড়াইল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বির রহমান
expand
তাড়াইল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বির রহমান

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মাদক ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সদর বাজারের ব্যাবসায়ী সংগঠন বণিক সমিতির আয়োজনে বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও সুধীজনদের নিয়ে চুরি,জুয়া ও মাদকবিরোধী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এসব সভায় তাড়াইল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বির রহমান উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।

এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে তাড়াইল থেকে মাদক নির্মূল করার জন্য ওসি সাব্বির রহমান উপজেলা গণমাধ্যমকর্মীদের গ্রুপে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসটি হুবহু নীচে দেয়া হলো-

মাদক নির্মূলে প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ

পারিবারিক, সামাজিক মুল্যবোধ এবং ধর্মীয় অনুশাসন থেকে বিচ্যুতি ঘটলেই মানুষের চিন্তায় কর্মে ও মননে শূন্যতা সৃষ্টি হয়; এই শূন্যতার ঘাটতি কখনো মিটে অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার অতিশয্যে আবার কভু হতাশায় ডুবে; তখনই মস্তিষ্কে বাসা বাঁধে মাদকাসক্তি। সমাজের মেধাবী ও সম্ভাবনাময় প্রতিভাবান তরুনরা মাদকের নেশার কবলে পড়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের পথ বেছে নিচ্ছে। জীবনবিধ্বংসী এ নেশার কবলে পড়ে অসংখ্য তরুণের সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশেষিত হচ্ছে। মাদক সেবনকারীর দেহমন, চেতনা, আবেগ, বিচারবুদ্ধি সবই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

মাদকাসক্তদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা ও কোনো ধরনের অপরাধবোধ তাদের স্পর্শ করে না, তাই চুরি, ছিনতাই সহ যেকোনো অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বিবেক বাধা দেয় না। এমন কি টাকার জন্য আপন পিতা-মাতাকে খুন করার মতো অপরাধও স্বাভাবিক বিষয়। মাদকাসক্তি ও নেশাজাতীয় দ্রব্য মানব সমাজের জন্য সর্বনাশ ও চিরতরে ধ্বংস ডেকে আনে, তাই ইসলামী আদর্শে মাদকদ্রব্যকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইসলাম মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, "নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম"। "যেসব পানীয়তে নেশা সৃষ্টি হয় তা সবই হারাম"।

পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অসৎ বন্ধুদের কুপ্রচারণা, কৈশোরের বাড়তি কৌতূহলে উঠতি বয়সী তরুণদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার প্রবনতা পরিলক্ষিত হয়। যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে যে নেশা করা ভালো কাজ নয় এবং নেশা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা ও জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে তা নয়, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে নানাভাবে। যেসব পরিবারের সদস্য নেশাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুর্দশা অন্তহীন। মাদকাসক্তি নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির বিবেক-বুদ্ধি, বিচারক্ষমতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলে। মাদকাসক্তি মানুষকে ব্যবহারিক জীবনে বিধিবদ্ধ দৈহিক আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং গুরুতর অপরাধ ও মহাপাপাচারে লিপ্ত করে।

জনসম্পৃক্ত পুলিশিং এর মাধ্যমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবার ও সমাজ থেকে মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের এ বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ। নেশা ও মাদকাসক্তির ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, তাই জনসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে এর প্রতিকার করা সম্ভব। মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ ও আন্দোলন, তার সূতিকাগার হতে হবে প্রতিটি পরিবার। একজন মাদক সেবী সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। পরিবারের পিতা-মাতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ধর্মীয় গুরু, ভালবাসার মানুষ একজন মাদকসেবীকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারেন। প্রতিটি শিশুর শৈশবকাল হতে পারিবারিক অনুশাসন, নৈতিক মূল্যবোধ ও সুস্থ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। আমরা যদি আমাদের ব্যস্ত সময়ের মধ্যে সন্তানের সামাজিক রীতিনীতি ও ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দেন, তাহলেই তরুনদের মধ্যে মাদকাসক্তি অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকে না।

পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মাদকাসক্তি বিস্তার প্রতিরোধ বহুলাংশে সম্ভব। প্রতিটি পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্টান মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। মাদক নিরাময়ে চাই পরিবারের ও সমাজের সচেতন মানুষের আন্তরিকতা ও পারস্পরিক ভালোবাসা। মাদকসেবন পরিত্যাগের ব্যাপারে আসক্ত ব্যক্তিদের স্বভাব বদলে আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হওয়া দরকার। বর্তমান প্রজন্মের অগ্রযাত্রাকে প্রাণঘাতী নেশার ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক ও গণমাধ্যমকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

প্রয়োজনে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে মাদকাসক্তি ত্যাগে আসক্তদের উৎসাহিত ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে; জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষেকে সম্পৃক্ত করে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়। সমাজের সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই মাদক বিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টি করেই কেবল চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের পথ সুগম হবে।

লেখক : মোহাম্মদ সাব্বির রহমান, অফিসার ইনচার্জ (ওসি), তাড়াইল থানা, কিশোরগঞ্জ।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন