

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


কচুরিপানার হালকা বেগুনি রঙের ফুল মন কাড়ে যে কারো। তবুও পুরো বিশ্বে কচুরিপানাকে ডাকা হয় দ্য বিউটিফুল ব্লু ডেভিল (সুন্দর নীল শয়তান) নামে।
শুধু খালবিল বা নদীনালা নয়, বোরো চাষের উপযোগী জলাশয়গুলোতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলের জলাশয় থেকে আসা আগ্রাসী এই জলজ উদ্ভিদ রীতিমতো বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের কৃষকদের। যা সরাতে বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে তাদের ৩ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বামনজল- হলহলিয়া-ডাকবাংলো খাল, চাচিয়া-পুঁটিমারী-মীরগঞ্জ-গোয়ালের ঘাট নদী, কিসামত সদর গ্রামের পূর্ব ধারে বয়ে যাওয়া তিস্তার ফেলে যাওয়া নালা, মরুয়াদহ বিলসহ আমন ও বোরো চাষযোগ্য নানা জলাশয়ের গলা যেন টিপে ধরেছে আগ্রাসী জলজ উদ্ভিদ এই ব্লু ডেভিল। পুরো নালা ও বিল জুড়ে যেন শুধু তাদের রাজত্ব।
যদিও এর ফুল ফুটে বিল ও নালা ছেয়ে গেছে হালকা নীল রঙে, কিন্তু কৃষকদের মন টানছে না সেদিকে। বরং তাদেরকে পেয়ে বসেছে একরাশ হতাশা। কারণ জলাশয়ের পানি কমে আসায় বোরো চাষের জন্য জমিগুলো প্রস্তুত করতে হবে তাদের। আর প্রস্তুতি হিসেবে পানি শুকানোর আগেই ব্লু ডেভিল নামক এই কচুরিপানাকে জমি থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে কৃষকদের। এ জন্য প্রতিবছর ফসল উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি বাড়তি খরচ হচ্ছে কৃষকদের অন্তত ২ হাজার ৫শ-৩ হাজার টাকা। এমন বিড়ম্বনার শিকার বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছেন তারা।
অন্যদিকে, উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে আগে যারা দেশি প্রজাতির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের জীবন কাটছে এখন দুঃখ-কষ্টে। খালবিল, নদীনালায় ব্লু ডেভিল জেঁকে বসায় এখন আর মাছ শিকার করতে পারছেন না তারা।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, 'বান, বন্যা হলে কচুরিপানাগুলো তিস্তা নদীতে ভেসে যেত। কিন্তু এখন আর আগের মতো বান, বন্যা এবং ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দ্রুত বিস্তার ঘটছে কচুরিপানার। যে দিকে চোখ যায়, শুধু পানা আর পানা। কোথাও ফাঁক নেই। জাল ফেলার জায়গা নেই। জীবিকার তাগিদে কখনো পানা সরিয়ে কষ্ট করে জাল ফেললেও তাতে মিলছে না মাছ। ফলে আগের মতো আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন না তারা। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো মতো খেয়ে-পরে জীবন চলছে তাদের।'
অক্টোবরের প্রথম দিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার তীরবর্তী কিসামত সদরের পূর্বধারে বিস্তীর্ণ চরে লাগানো আমন ধানের ওপর চেপে বসেছিল কচুরিপানা। দেখে মনে হবে ধানের ওপরে তো নয়, যেন কৃষকদের বুকের ওপর চেপে বসেছে ব্লু ডেভিল। ফসল রক্ষায় বুক বা কোমর সমান পানিতে নেমে কিষাণ-কিষাণীদের কচুরিপানা সরাতে দেখা যায়।
কিন্তু কৃষকদের শেষ রক্ষা হয়েছিল কি না- তা জানা না গেলেও ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি যে ব্যাপক হয়েছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। সকলের প্রশ্ন এই 'ব্লু ডেভিল' নামক আগ্রাসী উদ্ভিদ থেকে তাদের মুক্তি মিলবে কবে?
মন্তব্য করুন