সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াত প্রার্থী বাবাকে কটাক্ষ করে যুবদলনেতার বক্তব্য, সম্পর্ক ছিন্ন 

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ এএম
বাবা কামরুল ইসলাম খান, ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান
expand
বাবা কামরুল ইসলাম খান, ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান

বরিশালের গৌরনদীর একটি পরিবার সম্প্রতি সারাদেশের আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। কারণ একটাই—রাজনীতি।

বাবার দল জামায়াত, ছেলের দল বিএনপি। এই রাজনৈতিক পার্থক্য এবার রক্তের বন্ধনও ছিন্ন করেছে।

বরিশাল-১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম খান সম্প্রতি ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি তার বড় ছেলে, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আরাফাত বিল্লাহ খানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন।

কারণ, ছেলে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত নয়, বরং বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক এক জনসভায় ছেলের মন্তব্য আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

গত ৭ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি “বিপ্লব ও সংহতি দিবস” উপলক্ষে গৌরনদীর পাইলট স্কুল মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হুমায়ুন কবির।

সমাবেশে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের উপস্থিতিতে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খানের বক্তব্য দেন। তার দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে আরাফাতকে বলতে শোনা যায়, “আমার বাবা জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে উঠেছেন, সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছে; তাহলে কি সেই বিমানে ভ্রমণ করবেন?” জনতার একযোগে ‘না’ ধ্বনির পর তিনি নিজেই বলেন, “কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কোনো অভিজ্ঞতাও নেই।”

এই মন্তব্য ঘরে-বাইরে তোলপাড় সৃষ্টি করে। একই রাতেই কামরুল ইসলাম খান ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাস দেন।

প্রথম স্ট্যাটাসে লিখেন, “আমাকে পিতা পরিচয়ে বিএনপির পক্ষ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাতে কেউ হতাশ হবেন না। চিকিৎসা শেষে ফিরে আসছি, তারপর জরুরি বৈঠক করব।”

পরবর্তীতে তিনি আরও একটি পোস্ট দেন, যা সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়। সেখানে তিনি বলেন, “আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করাতে পারিনি। আমি ব্যর্থ পিতা। জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।”

কামরুলের ভাষায়, “ছেলের ওই বক্তব্যে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে। সে আমার পরিচয় দেওয়ার পরই কথা বলেছে, বিব্রতকর।”

অন্যদিকে আরাফাত বিল্লাহ খান বলেন, “আমি ২৫ বছর ধরে ছাত্রদল–যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে আছি। বিএনপি আমার রাজনৈতিক ঠিকানা। বাবা জামায়াত করেন, এটি তার পছন্দের বিষয়। আমি বিএনপি করি, এটি আমার।”

তিনি আরও যোগ করেন, “গণতান্ত্রিক দেশে মতের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু বাবা নমিনেশন পাওয়ার পর থেকেই জামায়াত–শিবিরের কিছু নেতা আমাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। বিষয়টা সহজ নয়।”

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারভিত্তিক বিভাজন নতুন নয়। তবে নির্বাচনের আগে প্রকাশ্য সম্পর্কচ্ছেদ বিরল ঘটনা। স্থানীয়রা বলছেন, এটি মতবিরোধের স্বাভাবিক ফল। আবার কেউ বলছেন, রাজনীতি এখন রক্তের সম্পর্কের চেয়েও গভীর।

গৌরনদীর এক চা-দোকানে স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক মন্তব্য করেন, “আগে রাজনীতি ছিল আদর্শের জায়গা, এখন সেটা পরিবার ভাগ করছে। বাবা–ছেলে পর্যন্ত দুই দলে।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন