

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


কক্সবাজারের উখিয়ায় আবারও অবৈধ বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা গেছে একটি বন্য হাতি। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের খয়রাতি পাড়ার একটি ফাঁকা মাঠ থেকে হাতিটির মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, রাতের শেষ ভাগে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হাতিটি। সকালে মাঠের ভেতর বিশাল দেহ পড়ে থাকতে দেখে তারা বন বিভাগকে খবর দেন। মুহূর্তেই এলাকাজুড়ে ভিড় জমে যায়- কারও চোখে জল, কারও মুখে ক্ষোভ। তাদের অভিযোগ, ফসল রক্ষার নামে কিছু মানুষ যে বৈদ্যুতিক ফাঁদের মতো নিষ্ঠুর পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছেন, তা সরাসরি প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ঘটনাস্থল থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা হাতির পায়ের ছাপ, বৈদ্যুতিক তারের অবশিষ্টাংশসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা, মাঠে কারেন্টযুক্ত জাল বা ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছিল। সেই ফাঁদে স্পৃষ্ট হয়েই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, মৃত্যু- কারণ নিশ্চিত করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, প্রয়োজনে ময়নাতদন্তও করা হবে। এ ছাড়া এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ফাঁদ পাতা ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীরা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, মানুষের সঙ্গে বন্য হাতির সংঘাত বাড়লেও বৈদ্যুতিক ফাঁদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে শুধু প্রাণী নয়, এলাকাবাসীর কেউ- এমনকি কোনো শিশু- ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাঁদের মতে, বনভূমি ধ্বংস, খাদ্যসংকট এবং হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ নষ্ট হওয়াই এ সংঘাতের মূল কারণ। দীর্ঘমেয়াদি সমাধান না করা হলে এ ধরনের মৃত্যু থামবে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাতিরা কখনো ফসল নষ্ট করলেও প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। তাঁরা নিরাপদ ফসল–রক্ষা প্রযুক্তি চালুর দাবি জানান।
বন বিভাগ বলেছে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অবহেলা বা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্যপ্রাণী হত্যার শাস্তি অর্থদণ্ড থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘাত কমাতে হাতির করিডর পুনরুদ্ধার, বাফার জোন গড়ে তোলা, সৌরচালিত নিরাপদ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
হাতিটির মৃত্যুর খবরে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিষয়টি জানি। মিটিংয়ে আছি, বিস্তারিত পরে জানাব।’
মন্তব্য করুন