

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


কক্সবাজারের উখিয়া বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তের মধ্যে ছাই হয়ে গেছে ১৬টি দোকান। বিকেলের শান্ত সময়কে মুহূর্তেই শোকের নগরে পরিণত করে দেয় আগুনের লেলিহান শিখা। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উখিয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে একটি ইলেকট্রনিক্স দোকান থেকে হঠাৎ ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। প্রথমে অনেকে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দিলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন পাশের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকান মালিকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও দোকান থেকে পণ্য বের করতে পারেননি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে, অনেকে দোকান বন্ধ করার সময়ই পাননি। কেউ কেউ দোকানের পেছনের দরজা ভেঙে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয়রা উখিয়া ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
খবর পেয়ে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এবং পরে টেকনাফ ও রামু ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্নিকাণ্ডে বাজারের মুদি, কাপড়, মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, ফার্মেসি ও হোটেলসহ মোট ১৬টি দোকান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। দোকান মালিকদের দাবি, তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকা হতে পারে। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন এক দোকান কর্মচারী, যিনি আগুন লাগার সময় দোকানের ভেতরেই ছিলেন।
আহত ১০ জনের মধ্যে ৬ জনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, আর গুরুতর দগ্ধ ৪ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত হলো চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মিজাখিল গ্রামের আলী মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী (৫৭)।তিনি কাঁচাবাজারের প্রবেশমুখে ম্যাট্রসেস দোকানের মালিক।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ডলার বড়ুয়া বলেনআগুন লাগার সঠিক কারণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানের বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন,
ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের মধ্যে মো. ইসমাইল নামের এক ব্যবসায়ী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,আমার দোকানে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই বাঁচাতে পারিনি। সব শেষ হয়ে গেল। পরিবার নিয়ে এখন পথে বসে গেছি।আরেক ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন,আগুন লেগেছে বুঝতেই পারিনি। যখন বাইরে আসি, তখন দোকান জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন না এলে পুরো বাজারই শেষ হয়ে যেত।
ঘটনার খবর পেয়ে উখিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাজার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন যৌথভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন আগুন লাগার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, উখিয়া বাজারে দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম নেই। বাজার এলাকায় সরু রাস্তা ও অসংখ্য বিদ্যুৎ সংযোগের তার ঝুলে থাকায় আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়। তারা বাজারে স্থায়ী ফায়ার পোস্ট ও উন্নত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন