

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


চলতি আমন মৌসুমে কুমিল্লা জেলা ব্যাপী টুংরো ভাইরাসের আক্রমণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শত শত হেক্টর আমন ধান। ধানের থোড় বের হওয়ার সময় এ ভাইরাসের আক্রমণে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। জেলার ১৭ উপজেলায় কয়েকশ হেক্টর জমি এ ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, জেলা ব্যাপী ১০৩ জাতের ধানে এ রোগ দেখা দিয়েছে। আমরা কাজ করছি এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে কিভাবে মুক্তি মিলে। তবে আমন ধানের বীজতলায় কীটনাশক স্প্রে না করায় এ সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে বলে তাদের ধারন।
আর কৃষকদের দাবি, সরকারি ভাবে যে প্রনোদনার বীজ দেয়া হয়েছে সেই বীজগুলোতে এ টুংরো ভাইরাস বেশি আক্রমণ করেছে। এ ভাইরাস যে জমিতে একবার দেখা দিয়েছে কোনো কীটনাশকেই আর কাজ করে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুম লক্ষমাত্রা নিধারন করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। তার মধ্যে হাইব্রীট ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর, উপষী ১ লাখ ৭ হাজার, ৫৭৬ হেক্টর, স্থায়ী ৩ হাজার ৪৫৪ হেক্টর। যা অর্জন হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর। তার মধ্যে হাইব্রীট ৩ হাজার ৪১৫ হেক্টর, উপষী ১ লাখ ৮ হাজার, ৬৪৮ হেক্টর, স্থায়ী ২ হাজার ৯১২ হেক্টর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলাা ১৭টি উপজেলার মধ্যে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, চৌদ্দগ্রাম, চান্দিনা ও বুড়িচং সহ সব উপজেলায় আমন মৌসুমে টুংরো ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ ভাইরাস যে জমিতে একবার দেখা দিয়েছে কোনো কীটনাশকেই আর কাজ করে না।
অপরদিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঙ্গড্ডা, পেড়িয়া, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ, হেসাখাল, মক্রবপুর, আদ্রা উত্তর, দক্ষিণ, জোড্ডা পূর্ব, পশ্চিম, মৌকরা, ঢালুয়া, দৌলখাঁড়, বক্সগঞ্জ, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ধান ক্ষেতে ব্যাপক হারে টুংরো ভাইরাসের আক্রমণে আমন ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এরই মধ্যে বাঙ্গড্ডা, পেড়িয়া, মৌকরা, জোড্ডা পূর্ব, পশ্চিম ও আদ্রা দক্ষিণ ও হেসাখাল ইউনিয়ন ঘুরে মাঠের পর মাঠ নষ্ট আমন ক্ষেত দেখা যায়। আবার কিছু জায়গায় ক্ষেত ভাইরাস আক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার পরামর্শ না পাওয়ার কারণে ইউনিয়নে আমন ক্ষেত্রের এই দশা। দুইয়েকজন কৃষক কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক দিলেও কোনো উপকার হয়নি বলে জানান তারা।
নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকরা ইউপির সুরপুর গ্রামের কৃষক সোলেমান দুঃক্ষ প্রকাশ করে বলেন, ৬০ শতক জমিতে আমন ধান করি। প্রথমে ধানের অবস্থা অনেক ভালো ছিলো। হুট করে দেখি কয়েকটি ধানের গোছা লাল হয়ে গেছে। পরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামশে ৩-৪ বার করে ৫ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার করি। এতে কোনো কাজ হয়নি। এখন কি কীটনাশকের মান ভালো না, না কি কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে তামাশা করছে। একই কথা পাশর্^বর্তী গোমকোট গ্রামের আবুল হাসেম ও আব্দুল কাদেরের। তারাও ৬০ শতক জমিতে আমন ধান করেন। পুরো জমির ধান নষ্ঠ হয়ে গেছে। এখন কেটে কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে লালমাই উপজেলার কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, নিজেরা খাওয়ার ৩০ শতক জামতে আমন ধান করি। প্রায় ৪ হাজার ২ শত টাকার কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো উপকার পাচ্ছি না। এ ভাইরাসে আক্রমনের ৭ দিনের মধ্যে পুরো জমি লাল হয়ে ধান গাছ মওে যায়।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি অফিসার মো: উজ্জ্বল হোসেন বলেন, বিক্ষিপ্ত কিছু জমিতে এ রোগের আক্রমণ হয়। সার্বক্ষণিক টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। উপ-সহকারীরাও মাঠে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে কিছু জমি উন্নত হয়েছে। আমরা প্রধম কথা হল, এ টুংরো ভাইরাস জমিতে দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আক্রন্ত ধানের চারাটি তুলে পেলতে হবে। কারণ বাতাসের সঙ্গে একটি গাছ আরেকটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ায়।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, জেলা ব্যাপী ১০৩ জাতের ধানে টুংরো ভাইরাসের আক্রমণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তার জন্য আমরা মাঠে মাঠে কাজ করছি। এখন আমন ধানের শেষ পর্যায়ে কয়েক দিন পরে কৃষক ধান কাটবে। সরকারি বীজে এ ভাইরাসের আক্রমণ বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বীজত আমরা দি না? এটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর কাজ। আমরা কেবল তাদের বীজগুলো কৃষকদের মাঝে বিতরন করি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কুমিল্লা উপপরিচালক (বীজ বিপণন) মো: নিগার হায়দার খান বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলে আমন মৌসুমে ১৬-১৭ শ টন বীজ দেয়া হয়েছে। বীজের কারণে এ টুংরো ভাইরাস হয়না। এটি মূলত মাটির কারনে হয়। কুমিল্লার চান্দিনায়, বুড়িচং, লালমাই ও নাঙ্গলেকাটে এ টুংরো ভাইরাস বেশি দেখা দিয়েছে।
মন্তব্য করুন