বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৩৪ বছর পর কারাগার থেকে ছাড়া

গ্রামের মানুষেরা অপেক্ষা ও আনন্দ

এনপিবিনিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম
৩৪ বছর পর কারাগার থেকে ছাড়া
expand
৩৪ বছর পর কারাগার থেকে ছাড়া

ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরকে আলাদা করা প্রাচীরের নিকটবর্তী কাতান্না গ্রামের শামাসনে বসবাসরত শামাসন পরিবার তাদের দুই ছেলেকে ঘরে ফেরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি কারাগারে ৩৪ বছর ধরে বন্দি থাকা আবদেল জাওয়াদ ও মোহাম্মদ মুক্তি পাচ্ছেন, এমন এক তালিকা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

৮৩ বছর বয়সী মা হালিমা শামাসন আশ্চর্য-উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলেন, আজ আমার আনন্দ এমন যে বর্ণনা করার ভাষাই নেই। মানুষ ফোন করে জানাচ্ছে, তাদের নাম তালিকায় রয়েছে ,তারা মুক্তি পাচ্ছে।

তারা এলাকায় বাড়ির সামনে নাতি-নাতনি ও আত্মীয়দের সঙ্গে একত্রিত হয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। পরিবারের সদস্যরা ছেলেদের স্বাগত জানাতে নানা আয়োজন করছেন। ঘরের দেওয়ালে ছিল তাদের দুই ভাইয়ের কারাগারে যাওয়ার আগের স্লিক বা ছবিগুলো-এখন তা ফ্যাকাশে হয়ে গেলেও স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে। ছবিগুলোতে তাদের বহন করা পোশাক ১৯৮০ দশকের ফ্যাশনের ছাপ বহন করে-কারণ ওই দশকেই তারা গ্রেপ্তার হন।

আবদেল জাওয়াদ বর্তমানে প্রায় ৬২ বছর বয়সী এবং মোহাম্মদের আয়ু ৫০-এর শেষভাগে। মুক্তির দিনটি সামনে দেখে মা হালিমা ঐতিহ্যবাহী প্যালেস্টাইনি সূচিকর্মের ‘তাবরিজ’ পোশাক পরেছেন, আর বাবা ইউসুফ স্যুটের সঙ্গে মাথায় কেফিয়া বেঁধে প্রস্তুতি নিয়েছেন।

ঘরের দেয়ালে লাগানো দুটি পোস্টারে দীর্ঘদিন ধরে লেখা ছিল “বন্ধুদের মুক্তির দাবি -এগুলোও পরিবারের সংগ্রামের ইতিহাস স্মরণ করায়। আবদেল জাওয়াদের ছেলে আজুজ শামাসন স্মৃতিমাখা কণ্ঠে বললেন, আমার বয়স তখন নয় বছর। এখন আমি ৪৪; বাবাকে ছাড়া বড় হওয়া ছিল এক বিশাল কষ্ট। তিনি যোগ করেন, ৩৪ বছর পর বাবাকে জড়িয়ে ধরা- তা বর্ণনায় ফেরা কঠিন। ছেলে পাশে খেলছে, আর ভাইরা আবেগে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি।

আজুজ, যে ইসরায়েলে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে, বলেন গত আট বছরে তাকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি,কারাগার কর্তৃপক্ষ পরিবার-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ রাখে।

ইসরায়েলি তালিকায় আবদেল জাওয়াদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজীবন কর্মদণ্ড রয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময় শতশত ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেলেও শামাসনের দুই ভাই তখনও ছাড়া পাননি।

বাবা ইউসুফ বলেন, সেদিনও আমাদের আশা ছিল, কিন্তু পূরণ হয়নি। আজ কিন্তু সত্যিকারের আশা।” তবে পরিবারের আনন্দে এক কিঞ্চিৎ অনিশ্চয়তাও আছে, কারণ অতীতে মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু বন্দিকে বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল। ইউসুফ বলেন, “আমি চাই ওরা এখানেই ফিরুক। বিদেশে পাঠালে ফিরে দেখা কঠিন হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিস্তৃত পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসরায়েল ও হামাস গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল ২৫০ জন বন্দি এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আটক করা প্রায় এক হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে।

ছেলেরা ফিরে এলে কী রান্না করবেন, এই প্রশ্নে হালিমা অতিশয় উৎসাহিত হয়ে বললেন, মানসাফ! আমরা একটা ভেড়া জবাই করব, তাদের এবং যারা দেখতে আসবে, তাদের জন্য ঐতিহ্যবাহী ভোজের আয়োজন করব।

তিনি আরও জানান, আজ রাতে ঘুমাব না-সারারাত জেগে সবাইকে স্বাগত জানাব।” কথার শেষ কথা বলতে গিয়ে তিনি গানও শুরু করেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন