

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ছয়জন হাই-প্রোফাইল ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির দাবি জানিয়েছে হামাস। তবে ইসরায়েল এ প্রস্তাবে রাজি নয়।
বিষয়টি ঘিরে চলছে তীব্র দরকষাকষি। ইসরায়েলের দাবি, এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হলে গাজায় প্রতিরোধ আন্দোলন আবারও জোরদার হতে পারে, যা দেশটির জন্য নতুন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে এ ছয় বন্দির বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরে।
ফিলিস্তিনি রাজনীতিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন মারওয়ান বারঘুতি। তাকে নিয়ে বন্দি বিনিময় আলোচনায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
১৯৬২ সালে পশ্চিম তীরের কোবার শহরে জন্ম নেওয়া বারঘুতি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে বীরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রনেতা হিসেবে ফাতাহ আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে ইসরায়েল তাকে জর্ডানে নির্বাসিত করে।
অসলো চুক্তির পর ১৯৯৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং পরে ফাতাহর মহাসচিব ও ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের সদস্য হন।
২০০২ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল। ২০০৪ সালে একাধিক হত্যার অভিযোগে তাকে পাঁচটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যদিও তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন। হামাসের সূত্রে জানা গেছে, বন্দি বিনিময়ের আলোচনার শেষ মুহূর্তে ইসরায়েল একতরফাভাবে বারঘুতির নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।
পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) সাধারণ সম্পাদক আহমদ সাদাতও দীর্ঘদিন ধরে বন্দি রয়েছেন।
১৯৫৩ সালে রামাল্লাহর আল-বিরেহ এলাকায় জন্ম নেওয়া সাদাত ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে পিএফএলপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে সংগঠনের নেতা আবু আলী মুস্তাফা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার পর তিনি নেতৃত্বের দায়িত্ব নেন।
২০০৬ সালে জেরিকো কারাগারে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আটকাবস্থায় তিনি একাধিকবার অনশন ধর্মঘট করেছেন।
আবদুল্লাহ বারঘুতি ইসরায়েলি কারাগারে সবচেয়ে দীর্ঘ সাজা পাওয়া বন্দিদের একজন। ১৯৭২ সালে কুয়েতে জন্মগ্রহণ করা এই হামাস নেতা ১৯৯০-এর দশকে পশ্চিম তীরে ফিরে আসেন এবং আল-কাসসাম ব্রিগেডের সঙ্গে যুক্ত হন।
তাকে সংগঠনের প্রধান বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৩ সালে গ্রেপ্তারের পর ইসরায়েলি আদালত তাকে ৬৭ বার যাবজ্জীবন ও ৫,২০০ বছরের সাজা দেয়।
কারাগারে তিনি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে। জীবনের বড় অংশই তিনি নির্জন কক্ষে কাটিয়েছেন।
১৯৭১ সালে গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেওয়া হাসান সালামেহও দীর্ঘ সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের একজন।
প্রথম ইন্তিফাদার সময় তিনি হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে একাধিক আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে ইসরায়েল তাকে আটক করে।
তাকে ৪৮ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১১ সালে গিলাদ শালিত বন্দি বিনিময় চুক্তির পর থেকে তার নাম প্রায়ই আলোচনায় এসেছে।
ইব্রাহিম হামেদ বর্তমানে ইসরায়েলি কারাগারে ৫৪টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ১৯৬৫ সালে রামাল্লাহর সিলওয়াদ এলাকায় জন্ম নেওয়া হামেদ বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে আল-কাসসাম ব্রিগেডে যোগ দেন।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় পশ্চিম তীরে একাধিক হামলার দায়ে ২০০৬ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১২ সালে আদালত তাকে ৪৬ জন ইসরায়েলিকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।
১৯৬৬ সালে পশ্চিম তীরের তুলকারমে জন্ম নেওয়া আব্বাস আল-সাঈদ ২০০২ সাল থেকে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি আছেন।
তিনি হামাসের সশস্ত্র শাখার একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ইসরায়েলি আদালত তাকে ৩৫ বার যাবজ্জীবন ও অতিরিক্ত ১০০ বছরের সাজা দিয়েছে।
কারাগারে তিনি একাধিক অনশন ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন এবং বন্দিদের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হিসেবে বিবেচিত।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, এ বন্দিদের মুক্তি পেলে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন আবারও শক্তি ফিরে পেতে পারে। অন্যদিকে, হামাসের দাবি—এই বন্দিদের মুক্তি না দিলে কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা বন্দি বিনিময় চুক্তি সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন
