রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাস্তায় নবজাতককে রাতভর পাহারা দিলো একদল কুকুর

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
ছবি সংগৃহীত
expand
ছবি সংগৃহীত

ভোরের নিস্তব্ধ সময়ে শীতের চাদরে মোড়ানো খোলা আকাশের নিচে চারদিকে নীরবতা, আশপাশে নেই কোনও মানুষের আনাগোনা।

ঠিক সেই সময় রেলওয়ে কর্মীদের কলোনির শৌচাগারের সামনে শীতল মাটিতে পাওয়া যায় এক নবজাতককে।

শিশুটির কান্নার আওয়াজের মাঝে সেখানে হাজির হয় কয়েকটি কুকুর।

সূর্যের আলো পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সেই শিশুটিকে ঘিরে বৃত্ত তৈরি করে পাহারা দেয় একদল পথকুকুর। খবর এনডিটিভির।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নদীতীরবর্তী নদীয়া জেলায় অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এই ঘটনা ঘটেছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুটির বয়স তখনও মাত্র কয়েক ঘণ্টা, শরীরে জন্মের রক্তের দাগ এখনও লেগে আছে।

শিশুটির শরীরে ছিল না কোনও কম্বল, না ছিল কোনও চিরকুট। এমনকি আশপাশে কোনও মানুষও ছিল না।

এমন পরিস্থিতিতে ওই নবজাতক একেবারে একাও ছিল না। পথকুকুরের দল নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে সকাল পর্যন্ত পাহারা দেয়।

এরপর যা ঘটে তা অনেকটা অলৌকিক ঘটনার মতোই। প্রতিদিন যাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়, সেই পথকুকুরের দল নবজাতককে ঘিরে নিখুঁত নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে দাঁড়িয়েছিল।

তারা ঘেউ ঘেউও করেনি, নড়েনি। কেবল রাতভর পাহারা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, কেবল ভোরের আলো ছাড়া রাতভর ওই নবজাতকের কাছে কাউকে আসতে দেয়নি পথকুকুরের দল।

নদীয়ার ওই রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা শুক্লা মণ্ডল প্রথম শিশুটিকে দেখতে পান। তিনি বলেন, ‌‌ঘুম থেকে উঠে আমরা এমন দৃশ্য দেখলাম, যা এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। কুকুরগুলো আক্রমণাত্মক ছিল না।

তাদের সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়। যেন বুঝতে পারছিল শিশুটি বাঁচার চেষ্টা করছে।

আরেক বাসিন্দা শুভাশ পাল ভোরের দিকে ছোট্ট শিশুর কান্নার শব্দ শুনেছিলেন। তিনি বলেন, ভাবছিলাম পাশের কোনও পরিবারের অসুস্থ শিশু হয়তো কান্না করছে।

কল্পনাও করিনি বাইরে এক নবজাতক পড়ে আছে, আর কুকুরগুলো তাকে পাহারা দিচ্ছে। তারা একেকজন প্রহরীর মতো আচরণ করছিল।

শুক্লা মণ্ডল ধীরে ধীরে শিশুটির দিকে যখন শব্দ করে এগিয়ে যান, কেবল তখনই কুকুরগুলো তাদের নিরাপত্তা বলয় থেকে সরে যায়।

তিনি নিজের ওড়নায় শিশুটিকে জড়িয়ে নেন এবং প্রতিবেশীদের ডাকেন।

পরে শিশুটিকে প্রথমে মহেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটির শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। মাথায় যে রক্ত দেখা গিয়েছিল, তা সম্ভবত জন্মদাগের।

আর তাকে ফেলে যাওয়ার ঘটনাটি প্রসবের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাতের অন্ধকারে স্থানীয় কেউ শিশুটিকে সেখানে ফেলে গেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

নবদ্বীপ থানার পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এবং শিশুটির দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষার বিষয়েও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সেখানকার এক রেলওয়ে কর্মী বলেন, এই পথকুকুরদের নিয়ে আমরা অভিযোগ করি। কিন্তু দেখুন, যে মানুষটি এই নবজাতককে ফেলে গেছে, তার চেয়ে বেশি মানবিকতা দেখিয়েছে এরা।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X