বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচন: যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতবিরোধ কী বলছে?

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১২ এএম
ছবি: সংগৃহীত
expand
ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের বাছাই বিশ্বের সব অঞ্চল থেকেই করা উচিত।

তবে ওয়াশিংটনের এই অবস্থান ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, কারণ তাদের বিশ্বাস এইবার মহাসচিবের পদটি ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের কারও প্রাপ্য।

জাতিসংঘের দশম মহাসচিব নির্বাচিত হবেন ২০২৬ সালের শেষের দিকে, যার দায়িত্বগ্রহণ নির্ধারিত ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, মহাসচিব পদটি আঞ্চলিকভাবে ঘুর্ণায়নের ভিত্তিতে বণ্টিত হয় এবং সেই হিসেবে এবার ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলই অগ্রাধিকার পাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু জাতিসংঘে মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকেই প্রধান বিবেচনা করা উচিত। প্রার্থিতার ক্ষেত্র যত বিস্তৃত হবে, তত বেশি যোগ্য ব্যক্তির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।

তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র চায় এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সব আঞ্চলিক গোষ্ঠীর যোগ্য প্রার্থীরা অংশ নিক, কেবল কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল নয়।

অন্যদিকে, পানামার জাতিসংঘ উপ-রাষ্ট্রদূত রিকার্ডো মস্কোসো নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, আমরা আশা করি, উন্নয়নশীল বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের মূল্যায়ন যথাযথভাবে হবে, বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে।

জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তখনই, যখন ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ ও ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদের সভাপতি যৌথভাবে মনোনয়ন আহ্বান করেন। সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রার্থী মনোনীত করতে পারে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের (যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স) সর্বসম্মত সমর্থনের ওপর।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, আঞ্চলিক রোটেশন কোনো বাধ্যতামূলক নিয়ম নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। ল্যাটিন আমেরিকার দাবিটি নৈতিকভাবে শক্তিশালী হলেও অন্য অঞ্চলের প্রার্থীদের অংশগ্রহণে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। যোগ্যতার ভিত্তিতেই নির্বাচন হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, যদি যোগ্য কোনো নারী প্রার্থী থাকেন, আমি তাতে সমর্থন জানাব। এখন সময় এসেছে লিঙ্গ সমতার প্রতিফলন ঘটানোর।

ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা মার্কুস লাসেনও মত দিয়েছেন, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পর সময় এসেছে একজন নারীকে নেতৃত্বের আসনে দেখার।

এদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক রিচার্ড গোয়ান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব রাখতে চায়। তার ভাষায়,

ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আগ্রহী। অনেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচনকে সমর্থন করলেও আশঙ্কা রয়েছে ওয়াশিংটন এমন একজন প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারে, যিনি জাতিসংঘের বহুপাক্ষিক নীতিকে শক্তিশালী না করে বরং সীমিত করতে চাইবেন।

যদিও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি, তবুও কিছু দেশ ইতিমধ্যেই নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করেছে। চিলি তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেলেটকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, আর কোস্টারিকা প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি রেবেকা গ্রিনস্প্যানকে প্রার্থী হিসেবে আনতে চায়।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের যোগ্যতাভিত্তিক প্রার্থিতা আহ্বান ল্যাটিন আমেরিকার ঐতিহ্যিক দাবির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে অঞ্চলটি ঐক্যবদ্ধভাবে লবিং চালিয়ে যেতে পারলে, শেষ পর্যন্ত তাদের দাবিই হয়তো বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন