শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একীভূত হওয়ার আগেই দরকষাকষি এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদের

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২৫ পিএম আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
expand
একীভূত হওয়ার আগেই দরকষাকষি এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদের

দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণ নেতৃত্বের উত্থানকে ঘিরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে নতুন করে একীভূত হওয়ার আলোচনা জোরালো হয়েছে।

এনসিপি গঠনের আগেই এই দুই সংগঠনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির আলোচনা শুরু হয়েছিল। শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকও হয়। তবে নুরুল হক নুরের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে আলোচনা থেমে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সেই পুরনো উদ্যোগ আবারও গতি পাচ্ছে।

যদিও গণঅধিকার ও এনসিপি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ হতে পারে। এতে ছাড়, সমঝোতা ও নানা শর্ত জড়িত। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপল অব বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-ও আলোচনায় যুক্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তরুণদের এই ঐক্য সফল হলে তা জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

এনসিপি এবং গণঅধিকার পরিষদ—দুই সংগঠনই শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। সমান অধিকার, বৈষম্যহীন সমাজ ও স্বচ্ছ রাজনীতির দাবি থেকে তাদের জন্ম। লক্ষ্য, ইতিহাস ও আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় তারা অনেকটাই অভিন্ন। এজন্য যৌথভাবে কাজ করলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের প্রভাব আরও জোরদার হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম মনে করেন, তরুণদের এই উদ্যোগ ইতিবাচক। তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসছে, বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। তারা যদি রাজনৈতিকভাবে সুসংগঠিত হতে পারে, তাহলে জাতীয় রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।”

নুরুল হক নুর সাম্প্রতিক এক ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ আলোচনা আবার জোর পায়। এরপর কয়েক দফা নির্বাহী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে দলের নাম, কাঠামো ও নেতৃত্ব নিয়ে এখনো সুরাহা হয়নি।

আলোচনায় উঠে এসেছে—বর্তমান নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাখার সম্ভাবনা বেশি। নেতৃত্বে নাহিদ ইসলামকে প্রধান রেখে নুরুল হক নুরকে মর্যাদাপূর্ণ পদে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। তবে গণঅধিকার পরিষদ চাইছে—দুটি পদ সৃষ্টি করে নাহিদ ইসলাম ও নুর দুজনকেই প্রধান হিসেবে রাখার।

একীভূত হওয়ার অন্যতম কারণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। তফসিল দ্রুত ঘোষণা হলে এনসিপির নিবন্ধন সম্পন্ন নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে গণঅধিকারের ব্যানারে নির্বাচন করার পথই খোলা থাকবে।

গণঅধিকার পরিষদের অনেক নেতা মনে করেন, নুরুল হক নুরকে অবশ্যই শীর্ষ পদে থাকতে হবে। কেউ কেউ নতুন কাঠামোয় নুরকে সভাপতি ও নাহিদ ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক রাখার প্রস্তাবও দিয়েছেন। তবে এনসিপির নেতারা চান, দল বিলুপ্ত না করে নিজেদের কাঠামো বজায় রেখে একীভূত হতে।

এ বিষয়ে এনসিপির উচ্চ পর্যায়ের সদস্য আবু হানিফ জানান, “বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। সবাই ইতিবাচক। নুরুল হক নুর চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে এ আলোচনা আরও এগোবে।”

গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান মনে করেন, তরুণ নেতৃত্বে জনগণের আস্থা বাড়ছে। কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হলে তারা জনগণের কাছে শক্তিশালী বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “আমাদের আদর্শ ও সংগ্রাম অভিন্ন। একসঙ্গে চলার বিষয়ে আমরা আন্তরিক। নেতৃত্ব ও নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে আমরা জনমতও নেব।”

অন্যদিকে, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, “দেশের মানুষ তরুণদের ঐক্য চায়। আলোচনা ইতিবাচকভাবে চলছে। প্রক্রিয়া কেমন হবে, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।”

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “যদি এটি বাস্তবে রূপ নেয়, দেশের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে।” আর যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ স্পষ্ট করে বলেন, “এনসিপি বিলুপ্ত হবে না, নামও পরিবর্তন হবে না। তরুণ শক্তিগুলো এক হলে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু হবে।”

এনসিপির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় যুক্ত হয়েছে আপ বাংলাদেশও। সংগঠনটির আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ নিশ্চিত করেছেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও প্রাথমিক আলাপ হয়েছে।

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে উঠে আসে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ২০২১ সালে দলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে আহ্বায়ক ছিলেন ড. রেজা কিবরিয়া, পরবর্তীতে নুর সভাপতি ও রাশেদ খান সাধারণ সম্পাদক হন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও লাভ করে।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে জন্ম নেয় এনসিপি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ দলের যাত্রা শুরু হয়। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন—দুজনই আগে নুরের গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এনসিপির অনেক নেতাই পূর্বে গণঅধিকার পরিষদ ও এর অঙ্গসংগঠনে সক্রিয় ছিলেন।

একসময় গণঅধিকার পরিষদই ছিল তরুণদের একমাত্র সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম। এখন এনসিপিও যুক্ত হয়েছে। একই আন্দোলন থেকে বেড়ে ওঠা দুই সংগঠন এক হলে তারুণ্যনির্ভর বিকল্প রাজনীতির সম্ভাবনা আরও জোরদার হতে পারে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন