রবিবার
২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি নাকি জামায়াত, কে পাবে আ.লীগের ভোট?

বিবিসি বাংলা
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
গোপালগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আজমল হোসেন সরদার/গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী কে এম বাবর
expand
গোপালগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আজমল হোসেন সরদার/গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী কে এম বাবর

২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন বড় আলোচনার বিষয় আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ভোটব্যাংক।

দলটির ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না–থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এই সুযোগে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে আওয়ামী সমর্থকদের নিজের দিকে টানতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।

স্থানীয় পর্যায়ে নৌকা–সমর্থকদের নিরাপত্তা, হয়রানি থেকে সুরক্ষা এবং মামলার জটিলতা কমানোর প্রতিশ্রুতিসহ নানামুখী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী ভোটারদের উদ্দেশে জামায়াত, বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের বক্তব্যও আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

গোপালগঞ্জে পরিবর্তিত মাঠপরিস্থিতি

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আসছে।

এবার সেখানে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী তিনটি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।

গোপালগঞ্জ–২ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আইনজীবী আজমল হোসেন সরদার জানান, স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।

তার ভাষায়—যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়, ভোটাররা নৌকাকেই বেছে নিতে পারে; কিন্তু তারা না এলে বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে বিবেচনার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এলাকায় বহু নাম-বেনামে মামলা থাকার কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছে। এসব হয়রানি থেকে মুক্ত করতে জামায়াত সহায়তা দিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিএনপিও গোপালগঞ্জে আওয়ামী ভোটারদের নিজেদের দিকে নিতে চায়। গোপালগঞ্জ–২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কে এম বাবরের দাবি, আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে ধানের শীষ এবার বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।

পাশাপাশি প্রতিশোধের রাজনীতি না করার অঙ্গীকারও ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।

তবে বিএনপি ও জামায়াতের বক্তব্য নিয়ে একে অপরের সমালোচনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এনসিপির মূল্যায়ন: গণঅভ্যুত্থানের পর গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, নৌকার ঐতিহ্যগত ভোটব্যাংক এখন অনেকটাই দুর্বল। দলটির নেতাদের মতে, ভোটারদের রাজনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন থেকে আসা নেতৃত্বের সমন্বয় এনসিপির জন্য ইতিবাচক বলে তারা মনে করেন।

এনসিপির মতে, অতীতে আওয়ামী লীগ করার পরেও যেসব সাধারণ ভোটার অপরাধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না, বরং পরিস্থিতির কারণে যুক্ত ছিলেন—তারা এবার প্রার্থী ও তার কার্যক্রম দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।

জামায়াতের কৌশল: জামায়াতে ইসলামী বলছে—আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না এলেও তাদের ভোটাররা তো রয়েই গেছে। তারা জনগণের কাছে সেই ভোটারদের ‘সাধারণ মানুষ’ হিসেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের দাবি—অপরাধে জড়িত না হলে রাজনৈতিক অবস্থান বদলানো কারও জন্য দোষের বিষয় নয়।

জামায়াত নেতাদের বক্তব্যে এবার হিন্দু সম্প্রদায়ও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে সমাবেশ করে তারা নতুনভাবে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

বিএনপির অবস্থান : বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তারা বলছে, কোনো নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক দখলে নেয়ার চেয়ে বড় বিষয় হলো ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপরিকল্পনা। তবে অনেক এলাকায় বিএনপি প্রার্থীরা নৌকা–সমর্থকদের নিজেদের পক্ষে নিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও দলের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে বিশেষভাবে দেখা যাচ্ছে। ভার্চুয়াল হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন তারই অংশ।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা—এটাই এখনো বড় প্রশ্ন। দলটির নিবেদিত সমর্থকরা শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনার ওপর।

তবে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে—জামায়াত, বিএনপি ও এনসিপি তিন দলই নৌকা, সমর্থকদের নিজেদের দিকে টানতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন